ময়মনসিংহে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়

স্টাফ রিপোর্টার:  ময়মনসিংহ শহরের স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে। শহরের মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড  কলেজ,  প্রগেসিভ মডেল স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দুই থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। তড়িঘড়ি এসব অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য কৌশল হিসেবে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ফরম পূরণের তোড়জোড় চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, তাদের সন্তানদের এসএসসির ফরম পূরণে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি’র বাইরে আরো অন্তত ২ থেকে ৩  হাজার টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে। এর মধ্যে ফরম পূরণ বাবদ বাড়তি সেসন ফি এবং ‘কোচিং ক্লাস’ নেয়ার কথা বলে আরো ৩ থেকে সাড়ে  হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু টাকার বিপরীতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন রশিদও দিচ্ছেন না। এছাড়া বিলম্ব ফি ছাড়া ১৯শে নভেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণের বোর্ডের নির্দেশনা থাকলেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করার জন্য ১৫ই নভেম্বর শেষ তারিখের কথা বলে টাকা আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ এর কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়টিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে ৫ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এর মধ্যে স্পেশাল কোচি ক্লাশ নেয়ার কথা বলে আদায় করা হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় একই রকম হারে শহরের মহাকালী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা, প্রগেসিভ মডেল স্কুল ৬ থেকে  সাড়ে ৬ হাজার টাকা  এছাড়াও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। অভিভাবকদের অভিযোগের প্রসঙ্গ তুললে সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, বাড়তি টাকা আদায় করা হয়নি। তবে অভিভাবকদের আগ্রহেই  কোচিং  ক্লাশের জন্য বাড়তি সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। আদায়কৃত টাকা বাবদ কেন রশিদ দেয়া হচ্ছে না, জিজ্ঞাসা করলে প্রধান শিক্ষক জানান, আমরা রশিদটি পরে দিয়ে দেব।
মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম দৈনিক লোকলোকান্তরকে জানান, তারা সরকার নির্ধারিত বিজ্ঞান বিভাগের ১,৪২৫/- টাকা ও ব্যবসায় ও মানবিক বিভাগ এর জন্য ১,৩৩৫/- টাকা ও আর ৩ মাসের বেতন ৯’শ টাকা ফি আদায় করছি। বাড়তি টাকা আদায় করছেন না। বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার দৈনিক লোকলোকান্তরকে জানান, ফরম পুরণ বাবাদ সরকার নির্ধারিত ১,৪২৫/- টাকাসহ মোট ১,৫২৫/- টাকা আদায় করছেন ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এর সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস এক পরিপত্রে উল্লেখ করেছেন এসএসসি পরীক্ষাদের নিকট থেকে বোর্ড কর্তৃক ফি ও ৩ (তিন) মাসের বেতন ) জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ )  ব্যতীত অন্য কোন ফি ( সেশন চার্জ ) আদায় না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দৈনিক লোকলোকান্তরকে জানান, বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়া কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবেন না। তিনি জানান, একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষা ফি বাবদ বিষয় প্রতি ৭০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ বিষয় প্রতি ৩০ টাকা, এডুকেশন ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৩৫ টাকা, সনদপত্র বাবদ ১০০ টাকা, স্কাউট ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ২৫০ টাকা আদায় করার কথা। যারা ১১ বিষয়ে পরীক্ষা দেবে এবং ৪ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা দেবে তাদেরকে মোট এক হাজার ২৯৫ টাকা দিতে হবে। এর বেশি টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক লোকলোকান্তরকে জানান, কোন অভিভাবক যদি বাড়তি টাকা আদায়ের ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্যসমূহ