বিশেষ প্রতিনিধি, বর্ণমেলা নিউজ ২৪ ডট কম:
স্থানীয় প্রশাসনের দূর্বল মনিটরিং, বাল্য বিয়ে, ইফটিজিংসহ শিক্ষকদের নানা
অনিয়ম, অব্যবস্থাপনায়, বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি ও
অনিয়মিত পাঠদানের ফলে, ভালুকা উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার গুনগতমান গত কয়েক
বছরে ক্রমান্বয়ে বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়। শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়নে বর্তমান
প্রশাসন সু-পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়
আন্তরিকভাবে কাজ করায়, মাত্র দেড় বছরে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার দৃশ্যমান
গুনগত মান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার
মোঃ কামরুল আহ্সান তালুকদার।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলার
প্রাথমিক স্তরের ৩শ’৯১টি বিদ্যালয়ের ৭৯ হাজার ৮ শত ৫৪ জন, মাধ্যমিক পর্যায়ে
৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৬ হাজার ৩শ ২৯ জন ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ৪২টি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ৪শ ৫০ জনসহ সর্বমোট- ১ লাখ ১৬ হাজার ৬শ’ ৩৩ জন
শিক্ষার্থী রয়েছে। রাজনীতিতে জড়িয়ে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি হার
বৃদ্ধি, বিভিন্ন কারণে প্রধান শিক্ষকের সাথে অন্যান্য শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা
কমিটির বিরোধ, অভিভাবকদের অসচেতনা, স্কুল চলাকালীন সময়েও শিক্ষকদের
প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং বানিজ্যে জড়িয়ে পড়া ও উপবৃত্তিতে সীমাহীন দুর্নীতি
অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়। এছাড়াও বাল্য বিয়ে ও ইভটিজিং এর কারনে শিক্ষার্থী
ঝরেপড়া, প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিং এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত
সমস্যাসহ নানাবিধ কারনে শিক্ষার গুনগত মান ক্রমান্বয়ে নি¤œমুখী হতে থাকে।
জেলার ২য় স্থান অধিকারী, ভালুকা উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার গুনগত মান, গত
কয়েক বছরে ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় এলাকার সচেতন ও আর্থিক ভাবে সচ্ছল
অভিভাবকগন তাদের সন্তানের ভবিষৎ চিন্তা করে সু-শিক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে
পরিবার-পরিজন নিয়ে ময়মনসিংহ ও ঢাকামুখী হতে শুরু করেন। কিন্ত আর্থিক ভাবে
অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিবাবকরা উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এ
অবস্থায় ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গত ২২ জুন-১৪ ইং তারিখে
মোঃ কামরুল আহ্সান তালুকদারের যোগদানের পর, বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থার গুনগত
মান উন্নয়নে প্রথমে তিনি উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক,
ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সহকারী শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, সংশ্লিষ্ট
ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও ভালুকায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও
ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে পৃথক পৃথক মত বিনিময়ের মাধ্যমে, ওইসব
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক চিত্র সংগ্রহ পূর্বক প্রকৃত সমস্যাগুলো
চিহ্নিত করেন। পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিতি ও
নিয়মিত পাঠদান নিশ্চিত করার জন্য তিনি সু-পরিকল্পিত ও বাস্তব সম্মত কয়েকটি
পদক্ষেপ গ্রহন করেন। সম্মিলিতভাবে আন্তরিক প্রচেষ্টায় গৃহীত প্রদক্ষেপগুলোর
সঠিক বাস্তবায়নে, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সকল ইউপি
চেয়ারম্যানকে নিয়মিত বিদ্যালয় মনিটরিং করার জন্য ডিও লেটার প্রদান করেন।
দুর্নীতিতে লিপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন ও
সেপ্টেম্বর-১৪ ইং পর্যন্ত সাধারন ক্ষমা পূর্বক উপবৃত্তিতে শতভাগ স্বচ্ছতা
নিশ্চিত করেন। উপজেলার কোচিং সেন্টার মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে সকাল ৯ থেকে
বিকাল ৫ পর্যন্ত সমস্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এছাড়াও
বাল্য বিয়ে ও ইভটিজিং বন্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে সকল মসজিদের
ইমাম, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনা চালান। নিয়মিত
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বাল্য বিয়ে ও ইভটিজিং এর অপরাধে রেকর্ড
সংখ্যক অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করেন। উল্লেখিত বিভিন্ন কার্যকর গ্রদক্ষেপ
গ্রহনের মাধ্যমে, বর্তমানে এ উপজেলায় পুর্বে অনেকটা নিয়মে পরিনত
মাত্রাতিরিক্ত বাল্য বিয়ে ও যন্ত্রনাদায়ক ইভটিজিং প্রায় শতভাগ বন্ধ হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি লক্ষে, বিদ্যালয়ের জবর দখলকৃত
নিজস্ব সম্পত্তি উদ্ধার, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
সম্পত্তি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নামজারী জমা-খারিজের ব্যবস্থাসহ উপজেলা
পরিষদের মাসিকসভার অনুমোদন সাপেক্ষে উন্নয়ন ও রাজস্ব তহবিলের অর্থায়নে,
অবকাঠামোগত ও আভ্যর্ন্তরীন সমস্যাগ্রস্থ্য বিদ্যালয় সমুহের সমস্যা দুর করে
শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি ও পাঠদান
নিশ্চিত করতে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আকস্মিক পরিদর্শন, অভিভাবকদের
সচেতনতার জন্য কাউন্সিলিং ও সমাবেশ চালু করেন। চাপরবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার
সুপার মোঃ মোবাশ্যারুল ইসলাম সবুজ জানান, শিক্ষার গুনগত মান উন্নোয়নে
উপজেলা প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ ব্াস্তবায়নের ফলে, শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল
পরিবর্তন হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান,
শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে
উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে একাধিকবার
শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোনীত হওয়া, ভালুকা উপজেলা নির্বাহী
অফিসার মোঃ কামরুল আহ্সান তালুকদার জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,
ভাইস-চেয়ারম্যানদ্বয়, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ ও সকল ইউপি
চেয়ারম্যানগণের আন্তরিক সহযোগীতায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষাপুযোগী
পরিবেশ সৃষ্টি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি ও নিয়মিত পাঠদানের
ব্যবস্থা গ্রহনে সক্ষম হয়েছি। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে শিক্ষার গুনগত মান
উন্নয়নে কাংক্ষিত লক্ষ অর্জন সম্ভব হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
মন্তব্যসমূহ