বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী সমর্থক একাধিক সিনিয়র শিক্ষক এসব অভিযোগ করেন। এছাড়া সংঘর্ষের পেছনে টেন্ডার প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ঠিকাদার, বহিরাগতদের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানা গেছে। ক্যাম্পাসের সব ধরনের অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বহিরাগতদের সম্পৃক্ততা থাকলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এমনকি সংঘর্ষে অংশ নেয়া অস্ত্রধারী ক্যাডাররা আটক হয়নি। উদ্ধার করা হয়নি কোনো আগ্নেয়াস্ত্র।
গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী ঠিকাদার, বহিরাগত, চাকরি প্রত্যাশীসহ প্রশাসনিক কর্তাদের ক্ষমতালিপ্সু মনোভাবকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। টেন্ডার ও বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কর্তারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপাচার্য ড. আবদুল হাকিম সরকার ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ভিসিপন্থি গ্রুপ ও সাবেক প্রো-ভিসি ড. কামাল উদ্দিনকে নিয়ে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আফজাল হোসেনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ক্যাম্পাসের যে কোনো বিষয়ে শিক্ষকদের এই দুটি গ্রুপ কখনোই ঐক্যমতে পৌঁছতে পারছেন না। এমনকি এই গ্রুপ দুটি তাদের প্রভাব বজায় রাখতে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপটি ভিসিপন্থি ও সহ-সভাপতি চাকরি প্রার্থী গ্রুপটি প্রোভিসিপন্থি হিসেবে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বিরোধিতা ও মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ক্যাম্পাস ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় গঠনের কথা ছিল। নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্য বেলা পৌনে ১২ টার দিকে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দীন কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে ভিসি অফিসে যান। তিনি ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারকে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি ভিসি অফিস ত্যাগ করার সাথে সাথেই সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজু গ্রুপের কর্মী জুয়েল রানা হালিম এবং ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাতের নেতৃতে প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী একই দাবিতে ভিসি অফিসে যান। তাদের সাথে চাকরী প্রত্যাশী আশিকুর রহমান জাপান, তৌহিদুর রহমান হিটলারসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত ভিসি অফিসে গিয়ে তাদের চাকরি না হওয়া পর্যন্ত কোন নিয়োগ বোর্ড হতে দেবে না বলে ভিসিকে হুমকি দেন। এর আগে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাস নিয়োগ বোর্ড করার জন্য ভিসিকে অনুরোধ জানান। এদিকে ভিসি অফিসের বাহিরে থাকা ছাত্রলীগের অন্য গ্রুপ ভিসি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মী শিশির ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ ভিসি অফিসে প্রবেশ করলে উভয গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইবির এক কর্মকর্তা ব্রেকিংনিউজকে জানান, শাপলা ফোরামের প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন ও একই ফোরামের অপর দুই প্রফেসর মাহবুবুল আরেফিন ও প্রফেসর রশিদ আসকারী মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয় ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি গ্রুপের ভরাডুবি হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিসংখ্যান বিভাগে কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রার্থী ছিল। তার নিয়োগ না হওয়ায় তিনি ছাত্রলীগের সহসভাপতি গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করে দেন।’
অভিযোগ আছে, ক্যাম্পাসে টেন্ডার কেন্দ্রিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের প্রভাব ও স্থানীয় ঠিকাদারদের অসন্তোষ সংঘর্ষের পেছনে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। এমনকি গত শনিবারের সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন, ঠিকাদার বিকাশসহ স্থানীয় ঠিকাদাররা প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। সেই সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগের চাকরি প্রত্যাশী ও বহিরাগতদের গ্রুপটি সামনে থেকে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা ব্রেকিংনিউজকে জানান, ‘ছাত্রলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার কারণে ও শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকার কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই অতি শিগগরিই ছাত্রলীগের কমিটি প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।’
মন্তব্যসমূহ