বছরের সেরা আবিষ্কার মুস্তাফিজ

বছরের সেরা আবিষ্কার মুস্তাফিজ
ঢাকা: ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম আলো ছড়ানো উদীয়মানের নাম মুস্তাফিজুর রহমান। পুরো বছর নয়, মাত্র ৮ মাসের পারফরম্যান্সেই যিনি বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন।

গত ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের পা রাখা। এরপর তো সেই চিরপরিচিত উক্তি- ‘ভিনি...ভিসি...ভিডি (এলাম...দেখলাম...জয় করলাম)’র মতোই নাটকীয় হয়ে গেলো তার বছরটা!

মূলত বিশ্বকাপেই মাশরাফির নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশকে দেখেছিলো ক্রিকেট দুনিয়া। তারপর পাকিস্তান সিরিজে মুস্তাফিজের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়।

বিশ্বকাপের পর পরই টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জিতে টাইগাররা। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে পরাভূত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগও নিশ্চত করে মাশরাফি বাহিনী। তবে নেপথ্যের যে গল্পটা সেখানে একমাত্র নায়ক মুস্তাফিজকেই বলা যায়।

এ মুহূর্তে ঘরের মাঠে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য সত্যি এক আতঙ্কের নাম বাংলাদেশ। আর সে পথে মুস্তাফিজের স্লোয়ার-কাটার যে কতোটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে আর কেউ না হলেও অধিনায়ক মাশরাফি ও কোচ হাথুরুসিংহে ভালো করেই সেটা টের পেয়েছেন। যদিও সৌম্য-লিটনের মতো তারকারাও উঠে এসেছেন চলতি মৌসুমেই তবু মুস্তাফিজের ‍সক্ষমতা একটু আলাদা ভাবেই প্রমাণিত হয়েছে।

অধিনায়ক মাশরাফি দলের ব্যাটিং লাইনআপে বরাবরই সিনিয়র খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও নাসিরদের উপর আস্থা রেখেছেন। তবে সেই আস্থার সাথে মুস্তাফিজ, সৌম্য ও সাব্বিরদের পারফরম্যান্স দলেকে আরো অনেকবেশি শক্তিশালী ও আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে।

২০১৫ সালেই প্রথমবারের মতো ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার পরই অবস্থান নিয়েছে টাইগাররা। ৭২.২২ শতাংশ ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়া জয়ের হার ৮৩.৩৩ শতাংশ। এ বছরই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ৪টি টেস্টে ড্র করেছে। টেস্টে এবারই প্রথম ৩০০ রানের জুটি গড়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম-ইমরুলের ৩১২ দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড। সেই টেস্টে ২০৬ রান করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের খেতাব পেয়েছেন তামিম।

এর আগে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সাথে পর পর দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি হাকিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অনন্য রেকর্ড গড়েন মাহমুদউল্লাহ। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রুবেল হোসেনের শেষ দুটি ডেলিভারি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দেয়।

ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ। পরের ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা, সঙ্গে হয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১১ উইকেট নেয়া প্রথম বোলারও। মুস্তাফিজের আগে প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ব্রায়ান ভিটরির।

আর তাই সবকিছুকে ছাপিয়ে চলতি বছরে মুস্তাফিজের নামটি ভিন্ন সুরেই উচ্চারিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহলে। আর সেটি হওয়াই যে যৌক্তিক তার প্রমাণ প্রতিনিয়তই রেখে চলেছেন ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অনন্য আবিষ্কার ২০ বছর বয়সী সাতক্ষীরার ছেলে মুস্তাফিজ। সূত্র: ক্রিকইনফো

মন্তব্যসমূহ