নিজস্ব সংবাদদাতা ■
গণবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্তৃক লাঞ্ছিত শ্রাবনীর শেষ কথা
‘প্রিয়
মা, আমাকে ক্ষমা করো । আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী নাসরিন মিস, মুন্না
স্যার আমাকে মারছে, পুরো স্কুল আমারে নিয়া হাসাহাসি করছে । মা আমি এই অপমান
সহ্য করতে পারি নাই তাই বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলাম । আমারে মাফ
করে দিও ।’ এভাবেই গণবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী
উম্মে হাবিবা শ্রাবণী আত্মহত্যার আগে চিরকুটে লিখে যায় এমন কথা। ঘটনার পর
থেকে স্কুলের শিক্ষক ফিরোজ হত্যা মামলার এজাহারভ’ক্ত আসামী কামরুল হাসান
মুন্না পলাতক রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ
সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র হাজী ওবায়েদ উল্লাহর ভাগিনা হওয়ার সুবাদে
খুনি হয়েও স্কুলের চাকুরী পায় মুন্না । অপরদিকে বিদ্যালয়ের ছাত্রীর এমন
ঘঁনার একদিন পরেই কান্ডজ্ঞানহীন আচরণ করে স্কুলের ভিতরে ভুড়িভোজের আয়োজন
করে ব্যাপকভাবে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান
শিক্ষক এম এ কাউয়ুম । গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত স্কুল ছাত্রীর লাশ যখন
হাসপাতাল মর্গে তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক সকল ঘটনা জেনেও
গতকাল শুক্রবারের ভুড়িভোজের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায় । শ্রাবণী মারা
গেছে এমনটা জেনেও না জানার অভিনয় করে প্রধান শিক্ষক কাউয়ুম ঘটনাকে
ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেস্টা চালায় ।
জানা
যায়, নবম শ্রেণরি ছাত্রী ওম্মে হাবিবা শ্রাবণী গত বৃহস্পতিবার জীব বিজ্ঞান
পরীক্ষা দেওয়ার সময় নকল করার অপরাধে শিক্ষিকা নাসরিন সুলতানা ও তানজিলা
তাহরিন পরীক্ষার খাতা ছিনিয়ে নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বারের
কাছে নিয়ে যায় । এ সময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির লোকজনের সামনে শ্রাবণীকে
মারধর করে স্কুলের বিতর্কিত শিক্ষক ও হাজী ওবায়েদ উল্লাহ ভাগিনা হত্যা
মামলার আসামী কামরুল ইসলাম মুন্না । সকলের সামনে মারধর ও অপমানের পর
শ্রাবণেিক নিয়ে হাসাহাসি ঠাট্টা করার ঘটনা সইতে না পেরে বাড়ীতে ফিরে নামাজ
পরে ফ্যানের সাথে ওরনা দিয়ে ফাসিতে আত্মহত্যা করে । ঘটনাটি আচঁ করতে পেরে
ভাড়াটিয়া বাড়ীর অন্যান্যরা শ্রাবণীকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে দ্রুত
নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন
শ্রাবণীকে মৃত ঘোষনা করেন ।
লাশের
খবর পেয়ে গণবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ লাশ যাতে ময়নাতদন্ত
না হয় সে লক্ষ্যে ভিন্ন উপায়ে পরিবারকে দিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে
যাওয়ার চেস্টা চালায় । ঘটনা জানাজানি হলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি,
প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যরা নিজেদের রক্ষা করতে হাসপাতালে ও নিহতের বাড়ী
যায় যায় ।
শুক্রবার
সকালে শ্রাবণীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে চিরকুটটি উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন ।
ময়নাতদন্ত শেষে সদর থানা পুলিশ নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে
গ্রামের বাড়ী ফেনীতে রওয়ানা হয় বিকেল ৪টায় ।
এমন
ঘটনায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, নিহতের পরিবারের
পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাই নাই । অভিযোগ দায়েরের পর আইনানুযায়ী
ব্যবস্থা নেয়া হবে । আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় সকল কিছুই করা হয়েছে ।
লাশ দাফনের পর তারা অভিযোগ করবে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নিহতের বাবা
হাবিবউল্লাহ ও মা সেতেরা বেগম ।
এব্যাপারে
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিরি সভাপতি তাদের দু জনের মোবাইল
বন্ধ থাকায় মন্তব্য জানা যায় নি। (০১৭১২৭৩১০৭৭ ও ০১৭১১২৬০৩৫৯)।
পাঠকদের জন্য উম্মে হাবিবা শ্রাবণী’র চিরকুটের পুরোটা হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘প্রিয় মা,
আমার
এই অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের স্কুলের নাসরিন মিস। সে বিনা কারণে আমার
পরীক্ষা দেওয়াটা বাতিল করে দিছে। মা আমি তাদেরকে অনেক বলছি কিন্তু কেউ আমার
কথা শুনে নাই, মা মুন্না স্যার বিনা কারনে আমারে মারছে। সবাই আমারে বিনা
কারনে মারছে। মা পুরো স্কুল আমার নিয়ে হাসাহাসি করতাছে। মা আমি এটি সহ্য
করতে পারি নাই। তাই আমি আত্যহত্যা করতে বাধ্য হলাম। মা যদি পারেন আমারে মাফ
করে দিয়ে জুয়েল ভাইরে বইলেন আমাওে মাফ করেদিতে,
ইতি হাবিবা
মা আমারে কাটাছিরা করতে না কইরেন।’
মন্তব্যসমূহ