হারুন অর রশিদ দুদু, ঝিনাইগাতী (শেরপুর): শেরপুরের
সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ঝিনাইগাতী উপজেলার ডেফলাই
গ্রামে প্রায় শতাধিক বেঁদে সম্প্রদায়ের পরিবার বসবাস করছে। প্রায় এক যুগ
ধরে সাভার থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার ডেফলাই গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসসহ
কালনাগ, কালিগুখোর, অজগর, গোখরা, আহলাদ, দারাজ, বাঁশপাতা, শঙ্খিনী, পদ্মিনী
আরো নাম না জানা বিভিন্ন জাতের বিষধর সাপ নিয়ে সাপুরিয়া বা বেদে সম্প্রদায়
দিনাতিপাত করছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ডেফলাই গ্রামের সাপুরিয়া
সর্দার সাইফুল ইসলাম ওরফে বাঘা সর্দার মানুষের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে
আসছে। বাঘা সর্দার দৈনিক লোক লোকান্তরকে জানান, সাপ ধরার কোন যাদু মন্ত্র
নেই, শুধুমাত্র গাছন্ত গুণে ও সাহস শক্তি কাছ করে। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন
স্থান থেকে বাঘা সর্দার এর নিকট লোকজন এসে হাঁপানি, বাত, অর্শ, এলার্জি,
বহুমুত্র, অক্ষমতা, অর্ধ বোবা, শ্বেতি, মৃগি ও নিঃসন্তান, অর্ধাঙ্গহানী
দ্রব্যগুণে চিকিৎসা নিতে আসতে শুরু করেছে। এতে অনেকেই বাঘা সর্দারের গাছন্ত
ঔষুধ দ্বারায় রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেছে বলে জানা গেছে। বাঘা সর্দার এ
প্রতিনিধিকে জানান, অর্থের প্রয়োজন নিজেদের জন্য নয়, সাপদের জন্য। সাপের
খেলা দেখুন আর রোগ সারাতে সাদা লজ্জাবতী নিন, বিনিময়ে সাপকে দুধ, মাছ
খাওয়ার জন্য যার যা মন চায় দেন। গ্রাম বাংলায় সাপুরিয়াদের একথাগুলো চলে
আসছে কত যুগ ধরে তার হিসাব যেমন কেউ রাখেনি, তেমনি স্থায়ী ভাবে ঘর বাড়ি না
থাকায় তাদেরকেও কেউ মনে রাখে না। খোলা আকাশের নীচে, গাছ তলায়, অস্থায়ী
ঝুপড়িতে, নদীর পাড়ে ও নৌকায় এদের বসবাস। পুথিগত বিদ্যা না থাকলেও সাপ ধরা
আর সাপ নিয়ে খেলা দেখানোর কৌশলই এদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। আর এ
সম্প্রদায়ের নারীরা ছোট বাক্সে সাপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি বাত ছাড়াতে চোঙ্গা দিয়ে
মানুষের শরীর থেকে রক্ত আনা, দাঁতের পোকা বের করাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা
দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের রুটি রুজির জোগান দিয়ে থাকে। বেদে
সম্প্রদায়ের ভবিষ্যত নেই, শুধু আছে অতীত। সরকারীভাবে এদের সংখ্যা জানা
যায়নি। বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারের কয়েকজন সদস্যরা জানান, সাপুরিয়াদের জমি
জমা না থাকলেও কোন চিন্তা ভাবনা নেই। সরকারকে খাজনা বা ট্যাক্স দিতে হয় না।
দুঃখ একটাই তা হচ্ছে যোগাযোগের মাধ্যম পরিবর্তন হওয়া। এখন নদী শুকিয়ে
যাওয়ায় স’ল পথে যাতায়াত করতে হয়। এমনিতে ছন্নছাড়া জীবন। সাপের খেলা দেখিয়ে,
সাদা লজ্জাবতী বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যায় তার সিংহভাগই ব্যয় হয়ে যায়
সাপের খাওয়া ও চিকিৎসায়। আবহাওয়া প্রতিকূলতার কারণে বছরের অনেক সময় বেকার
হয়ে বসে থাকতে হয়। লোক লজ্জার ভয়ে এ কষ্টের কথা থেকে যায় তাদের অন্তরে।
বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৫/৬ ঘন্টা ঘুমায়। বাকী সময়
থাকতে হয় মজমা জমিয়ে সাপ খেলা দেখানো, লজ্জাবতী গাছ সংগ্রহ, তাবিজ কবজ তৈরী
ও ক্রয়-বিক্রয় করতে। এ থেকে যা আয় হয় তার অর্ধেকের বেশি অর্থ ব্যয় হয়ে যায়
সাপের জন্য। এতো কিছুর পরেও কষ্টে লালন পালন করা সাপ তাদের দংশন করে, তখন
তাদের আর করার কিছুই থাকে না। সাপের দংশনে বেদে মৃত্যুর ঘটনা নেহায়েত কম
নয়।
মন্তব্যসমূহ