প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়ে ভারত আজ বলেছে এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ‘জলবায়ুগত ন্যায়’ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের আগে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দূষণকারী দেশ হিসেবে ভারতকে সম্ভাব্য সমঝোতার পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছিল, সেই ভারতই যখন চুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছে তখন সেটাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে ভারতে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন, এখনই খুব একটা উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ ঘটেনি – কারণ বাস্তবে ভারত কতটা অঙ্গীকার রাখতে পারবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।
প্যারিসে কপ-টোয়েন্টি ওয়ান জলবায়ু সম্মেলনের ঠিক আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি কার্টুন বেরোয় – যাতে দেখানো হয়েছিল প্যারিসের জলবায়ু আলোচনা যে রেললাইন ধরে চলছে, সেখানে রাস্তা আটকে বসে আছে বিশাল এক হাতি। সেই হাতিটি আর কেউ নয় – ভারত, যেখানে দূষণসৃষ্টিকারী কয়লার ব্যবহার সাঙ্ঘাতিক পরিমাণে বেশি।
অথচ সম্মেলনের শেষে যে সমঝোতা হল তাকে স্বাগত জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছেন প্যারিসে কেউ জেতেনি বা হারেনি – জলবায়ুর ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আলোচনায় শেষ মুহুর্ত অবধি মাটি কামড়ে থাকা ভারতের পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভাডেকরও সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ভারত আশা করবে প্যারিস এক নতুন ধারার সূচনা করবে যেখানে সবাই তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করবে। ভারতের আরও আশা, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যেমনটা বলতেন আমরা পৃথিবীর যে দিন দেখব না তারও জন্য যেন যত্নবান হই – প্যারিস সমঝোতা তার সেই ইচ্ছাকেও পূর্ণ করবে।”
ভারতকে এই সমঝোতায় বেশ কিছুটা আপস করতে হয়েছে, প্রকারান্তরে সে কথা মেনে নিয়েও মি জাভাডেকর দাবি করেছেন বড় বড় জিনিস অর্জন করতে হলে সবাইকে কিছুটা ছাড় দিতেই হয়, আর সমঝোতার মূল ভাবনাকে ভারত অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছে।
তবে সরকার যাই বলুক, কার্বন নির্গমন কমানোর যে অঙ্গীকার ভারত করেছে – বাস্তবে তার রূপায়ন খুব সহজ হবে বলে মনে করেন না এ দেশের পরিবেশবিদরাই।
অ্যান্টি-কোল ক্যাম্পেনার কে সি আয়াপ্পা যেমন বলছিলেন, ‘ভারতে কয়লা লবি খুবই শক্তিশালী। ফলে আমি জানি না তারা এটাকে ভাল খবর বলে মনে করবে কি না। রাজনীতিকরা এখন এই কয়লা লবি আর প্যারিসের মধ্যে একটা ভারসাম্য বিধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
‘ভারতে এখনও বিদ্যুতের প্রধান উৎস কয়লা, তা চট করে পরিবর্তন হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু কাউকে তো একটা বেড়াল মারতেই হবে, আর ভারতের যা জনসংখ্যা তাতে তারা একটা সঠিক পদক্ষেপ নিলে তার প্রভাব হবে বিশ্বব্যাপী। ফলে আমার মতে আর দায়সারা পদক্ষেপ নয় – এখনই ঝাঁপাতে হবে পুরোদমে’, বলছেন মি আয়াপ্পা।
প্যারিস সমঝোতায় অবকাশ রাখা হয়েছে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য প্রতিটি দেশের যে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে তা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পর্যালোচনা করা হবে।
ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনসেন্টের প্রধান সুনীতা নারায়ণ বলছেন, ‘তা সত্ত্বেও উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানির বাণিজ্য কিন্তু চলতেই থাকবে – এবং সবচেয়ে শস্তা জ্বালানিটা বেচার প্রক্রিয়াও অব্যাহত থাকবে, আমাকে এটাই উদ্বেগে রেখেছে। ভারত হয়তো বলল আমরা করছি না, কিন্তু ছোটখাটো আরও অনেক দেশ তো সেটা করতেই পারে।’
তার পরেও ভারত সরকার মনে করছে বা প্রকাশ্যে অন্তত দাবি করছে প্যারিস সমঝোতা সবার জন্যই এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে।
কিন্তু যে দেশগুলোর পক্ষে এই সমঝোতার বাস্তবায়ন সবচেয়ে কঠিন হবে – তার মধ্যে ভারতের স্থান যে একেবারে ওপরের দিকে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
মন্তব্যসমূহ