তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওরে অতিথি পাখির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠলেও গত
বছরের তুলনায় অতিথি পাখি আসে নি। তারপরও বসে নেই পাখি শিকারীরা পাখি শিকার
করছে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের কারেন্ট জাল ও ফাদঁ দিয়ে। গত শনিবার ১৯
জানুয়ারী টাংগুয়ার হাওরে পাখি শিকার করার আশা নুর মিয়া নামে একজন কে
ভ্রম্যমান আদালত তিন মাসের কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করেছে। ৩০
জানুয়ারী মেহেরুল ইসলাম নামে এক পাখি শিকারী পাখি শিকার কে ৬টি অতিথি পাখি
সহ আটক ভ্রাম্যমান আদালত ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে জেলহাজতে প্রেরন
করেছে। তারপরও থামছে না পাখি শিকার প্রতিদিনেই শিকার করছে শিকারীরা কিন্তু
অন্য শিকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
টাংগুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা
কারনেই পাখি শিকার হচ্ছে বলছেন সচেতন মহল। এদিকে আশানুরুপ পাখি দেখতে না
পারায় ও থাকা,খাওয়া,যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার দেশ-বিদেশ এবং বিভিন্ন জেলার
হাজার হাজার পর্যটক কমে গেছে। এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের
উদ্যোগ,অতিথি পাখি ও হাওরের সঠিক ভাবে রক্ষনাবেক্ষন না করায় ক্ষোব প্রকাশ
করছেন বেড়াতে আসা পর্যটকগন।
টাংগুয়ার হাওর তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত
ভারতের মেঘালয় পাহড়ের পাদদেশে অবস্তিত। তুষার পাত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে
নিজেদের রক্ষার জন্য প্রতি বছর শীত মৌসুমে শীত প্রধান দেশ সূদুর
সাইবেরিয়া,চীন,মঙ্গোলিয়া,নেপাল সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এরা ঝাঁেক
ঝাঁকে ছুটে আসে বিশাল জল রাশির টাংগুয়ায় হাওরে। একটানা ডানা মেলে আকাশের
উড়ার ক্লান্তিতে পাখিরা প্রথমে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও প্রচুর খাবার সমৃদ্ধ
টাংগুয়ার হাওরে বিচরন করে তারা যেন সজিবতা ফিরে পায়।
পৃথিবীতে প্রায় ১০হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১হাজার ৮শত ৫৫ প্রজাতির
পাখিই পরিযায়ী। শীতের এই সময় পূর্নিমা আর গোর আধার আলোতে রাতের আকাশে অতিথি
পাখির ডাকে এক বিভিন্ন রখম অনুভুতির জন্ম দিয়েছে টাংগুয়ার হাওড় পাড়ের
বসবাকারী ও বেড়াতে আসা পর্যটকদের মনে। পূর্ব দিগন্তে সোলানী সূর্যের উঠার
পর সকালে সোনালী রোধে সূর্য সেরে পাখির দল চষে বেড়ায় হাওরের এক প্রান্ত
থেকে অন্য প্রান্তে খাবারের সন্ধানে। হাওর জুড়ে দলবদ্ধ ভাবে অতিথি পাখির
বিচরন,জলে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করা,শামুক খাওয়া,জলকেলি,খুনটুশি আর
কিচিরমিচির কলতানে হাওর পাড়ের মানুষের সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার এই সৃষ্টি
আবহ পাখি প্রেমিদের সহজেই নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে।
পরবাসী বিঙ্গগকুল আর দেশীয় পাখিদের মিলন-অভিসারে যেন র্স্বগীয় পরিবেশ
তৈরি হয়েছে হাওরে। যানাযায়-টাংগুয়ার হাওরে প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে
এর মধ্যে ৯৮প্রজাতির পরাযায়ী,১২১প্রজাতির দেশি ও ২২প্রজাতির হাঁসজাত পাখির
বিচরন করে আগত পাখির মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হল-বিরল প্রজাতির প্যালাসেস
ঈগল,মৌলভীহাঁস,পিয়ারী,কাইম,রামকুড়া,মাথারাঙ্গা,বালি হাঁস,লেঞ্জা,চোখা
চোখি,বেগুনি কালেম প্রভৃতি।
২০১১সালে টাংগুয়ার হাওরে পাখি শুমারীতে এই হাওরে চটাইন্নার
বিল,তারখাল,রোয়া বিল,লেচুয়ামারা বিল,রুপাবই,হাতিরগাতা বিল,বেরবেরিয়া
বিল,বাইল্লার ডুবি,তেকুন্না ও আন্না বিলে প্রায় ৬৪ হাজার পাখির অস্থিত
পাওয়া যায়। এতে ৮৬ জাতের দেশি ও ৮৩ জাতের বিদেশি রয়েছে। এছারাও এই শুমারিতে
অন্যান্য পাখির পাশাপাশি ছোখে পড়ে-মরিচা
ভুতিহাঁস,পিয়াংহাস,নীলশির,পাতিহাঁস ইত্যাদি।
হাওরের নানান প্রজাতির জলাবন,হিজল কড়চ,নলখাগড়া বিলুপ্তি,ইঞ্জিন চালিত
মেশিনের শব্দ এবং রাতের আধারে মাছ ধরার জাল সহ বিভিন্ন ধরেনের ফাঁদ দিয়ে
অতিথি পাখি শিকার করায় কমে গেছে। রাষ্ট্রীয় ভাবে অতিথি পাখি শিকার করা
দন্ডনীয় হলেও এলাকার স্থানীয় কিছু পাখি শিকারী,ব্যবসায়ীরা টাকার বিনিময়ে
আনসার বাহিনীদের সহযোগীতার ও টাংগুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের
সহযোগীতায় অতিথি পাখি শিকার করে। যার জন্য পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে
বলে স্থানীয় হাওর পাড়ের এলাকাবাসীর অভিযোগ।
টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা তাহিরপুরের সাদেক আলী,রফিকুল ইসলাম,মেহেদী
হাসান জনমেজর ভূঁইয়া জানান-বাড়িতে রাতে ঘুমানোর আগে আকাশে পাখিদের উড়ার শো
শো শব্দ এখন আর শোনা যায় না। কারন এবার পাখি কম এসেছে। এ হাওরে বন্য প্রানী
সংরক্ষন ও নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা না হলে বিপন্ন হবে টাংগুয়ার হাওরের
স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্য। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা,থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না
থাকার কারনে পর্যটকদের টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা কমে যাচ্ছে।
আইইউসিনের বন্য ও পাখি গবেষক জানান-ডিসেম্ভরে কম আসলেও ফেব্রুয়ারীতে
অতিথি পাখির আগমন গঠবে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার অতিথি পাখির আগমন গঠেছে
হাওরে। তবে হাওরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান-শীতের শুরুতে পাখি না আসায় এখন
বা পরে পাখি আসার কোন আশা করা যায় না। টাংগুয়ার হাওরে দায়িত্বে থাকা
ম্যাজিষ্ট্রেড জানান-হাওরে কোন প্রকার অনিয়ম কে ছাড় দেওয়া হবে না। পাখি
শিকারীদের কঠোর হস্তে ধমন করা হচ্ছে এবং হবে।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান-ঐতিয্যবাহী
টাংগুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষা করা ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য
যুগপোযোগী কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহন করা খুবেই প্রয়োজন। তাহিরপুর উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবার হোসেন জানান-টাংগুয়ার হাওর রক্ষনাবেক্ষনের জন্য
সর্বাত্বক চেষ্টা অবাহত আছে এবং কোন প্রকার অনিয়ম ছাড় দেওয়া হবে না।
মন্তব্যসমূহ