নওগাঁর সফল উদ্যোক্তা রাজু তৈরী করলেন মশা তাড়ানোর মেশিন

নওগাঁর সফল উদ্যোক্তা রাজু তৈরী করলেন মশা তাড়ানোর মেশিন
নওগাঁর সফল উদ্যোক্তা রাজু তৈরী করলেন মশা তাড়ানোর মেশিন
যন্ত্রটির নাম ‘রাজু মসকিউটো রিপেলার মেশিন’।
নওগাঁ শহরের দুবলহাটী রোডে হাট-নওগাঁ আলহাজ্ব ইদ্রীস আলী ইলেকট্রিক এন্ড ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব তৈরী প্রযুক্তিতে ফেলনা জিনিসপত্র ব্যবহার করে যন্ত্রটি আবিষ্কার করছেন। মশা তাড়ানোর যন্ত্রটি বাজারজাতের জন্য ঢাকা ডিপার্টমেন্ট অফ প্যাটেন্ট, ডিজাইন এন্ড ট্রের্ড মার্কস থেকে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর রেজিষ্ট্রেশন করেছেন।
মশা নিধনে প্রযুক্তিতে কতো কিছুনা তৈরী করা হচ্ছে তার ইয়োত্তা নেই। মশা নিধনে রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরী কয়েল, গুড নাইট, ইলেকট্রিক কয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কয়েলই হোক না কেন সবই পরিবেশ এবং স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন তিনি।
তবে পরিবেশ এবং স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন একটি যন্ত্র গত ৪ মাসের গবেষণায় আবিষ্কার করেন এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু। যন্ত্রটিতে বাজারে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি ছোট স্বল্প মূলের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া অন্যকোন ম্যাকানিজম উপাদান নেই। যন্ত্রটিতে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, পেন্সিল ও ঘড়ির রির্চাজেবল ব্যাটারি, একটি ছোট সার্কিট, শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যান্ড পাইব, ব্যাটারি চার্জের জন্য একটি চার্জার ব্যবহৃত হয়েছে। ঘরের মধ্যে ব্যবহারের জন্য যন্ত্রটিতে একটি সাড়ে ৯ভোল্টের মটর এবং সাড়ে ৩ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। আর বাহিরের পরিবেশের জন্য সাড়ে ৯ ভোল্টের মটর এবং সাড়ে ৬ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই ব্যাটারির সাহায্যে প্রায় ৬/৮ ঘন্টা চালানো সম্ভব।
একটি ঘরে যন্ত্রটি চালু করার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর কাজ শুরু হয়। ঘর যতো বড় হবে সময় ততো বেশি লাগবেই। তবে একটা যন্ত্র দিয়েই মশা তাড়ানো সম্ভব। যন্ত্রটি ঘরের দরজা-জানালা খোলা বা বন্ধ সব অবস্থাতেই সমান ভাবে কার্যকর।
‘রাজু মসকিউটো রিপেলার মেশিন’টি ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া নওগাঁ শহরের একটি জয় টেলিকম এ্যান্ড সার্ভিস সেন্টারের মালিক ফারুক হোসেন জুয়েল, হাট-নওগাঁ মহল্লার প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়ার আব্দুস ছাত্তার, একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির সেলস্ ম্যানেজার হুমায়ন কবিরসহ অনেকে।
আক্কাস আলী জানান, চার জনের পারিবারের আগে প্রতিদিন বাড়ীতে গড়ে ৭ থেকে ১০ টাকার কয়েল পুড়িয়ে খরচ হতো। ‘রাজু মসকিউটো রিপেলার মেশিন’ আবিস্কারের পর রাজু তাকে দুই দিনের জন্যে ব্যবহার করতে দেন। ঘরের মধ্যে ব্যবহার করে ওই দুইদিন তার কোন কয়েল জ্বালাতে হয়নি। কোন মশারও কামড়ও খেতে হয়নি।
গৃহবধু ফরিদা আক্তার জানান, ঘরের মধ্যে মেশিনটি চালু করার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর থেকে একটি মশাও দেখা যায়নি। মশারিও টাঙ্গাতে হয়নি।
প্রস্তুতকারী এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু জানান, মশার শরীর পানি দিয়ে তৈরী। এই চিন্তা থেকেই এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করা হয়েছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে আল্টা-সাউন্ড নামে শব্দ বা কম্পন (শোনা যাবে না) উৎপন্ন হবে। যন্ত্রটা ঘন্টার পর ঘন্টা চালু থাকলেও এর শব্দে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোন প্রভাব থাকবে না। আর এই আল্টা-সাউন্ড নামে শব্দ বা কম্পনের মশার শরীরেও কম্পন তৈরী হবে। একটি নির্দিষ্ট জায়গা/এলাকা জুড়ে মশা না মরে পালিয়ে যাবে বা মশা থাকবে না। মশা তাড়ানোর জন্য যন্ত্রটিতে কোন প্রকার রাসায়নিক উপাদান বা ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়নি।
তিনি আরো জানান, যন্ত্রটি কার্যকরী, বিভিন্ন আকারের, স্থানান্তরযোগ্য ও নিরাপদ। ঘরের বাইরে, গরুর গোয়ালে, বাগানে, খোলা জায়গায় ব্যবহার উপযোগী। স্বাভাবিক ভাবে যন্ত্রটি বছরের পর বছর চলবে। তবে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে এবং মটরের ক্রুটি হলে পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিমাসে যন্ত্রটি একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্বের চেয়েও কম বিদ্যুৎ খরচ হবে। বাজার মূল্যনির্ধারণ করা হয়েছে ১শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা। এটি বাণিজ্যিক ভাবে চালু করা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন রাজু।

মন্তব্যসমূহ