বেবি অব দ্য আদ-দ্বীন


বেবি অব দ্য আদ-দ্বীন‘বেবি অব দ্য আদ-দ্বীন’। রমনায় ছয়তলা থেকে ছুঁড়ে ফেলা নবজাতকের নাম এটি। নবজাতকটি উদ্ধারের পর থেকে মগবাজারের বেসরকারি আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই নামে চিকিৎসাধীন। তিনদিন ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও পুলিশ মিলে নবজাতকের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করে সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
নবজাতকটি গত দুইদিনের চেয়ে বুধবার নড়াচড়া একটু কম করছে। অনেক ওপর থেকে পড়ায় তার মস্তিষ্কে হালকা আঘাত রয়েছে। তবে তা গুরুতর নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তার চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এদিকে তার মা বিউটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে কাউন্সেলিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরের পর মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, নবজাতকটিকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। প্রফেসর ডা. এসএম জাগরুল হকের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বুধবার তারা মাথার আলট্রাসনোগ্রাফি করা হয়েছে। তাতে তার মস্তিষ্কে সামান্য আঘাত ধরা পড়েছে। তবে তা গুরুতর নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আদ-দ্বীন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন জানিয়েছেন, প্রথম দুইদিন নবজাতকের অ্যাক্টিভিটিস বেশি ছিল। বুধবার তার অ্যাক্টিভিটিস একটু কম। তবে সে আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তাকে এনআইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নবজাতকের বাম-পা ভাঙা। সে কারণেও তার নড়াচড়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে সর্বোচ্চ সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছি। আমাদের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন নবজাতকটির নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। আদ-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতকের সঙ্গে আছে, থাকবে।’
আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক শিশু বিভাগ নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) ইনচার্জ রিনা জানান, এনআইসিইউয়ের নার্সরা নবজাতকটিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা কিছুক্ষণ পরপর তাকে দেখছেন, তার কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা? নবজাতকের সব অ্যাক্টিভিটিস নোট করে তা চিকিৎসকদের জানানো হচ্ছে। তাকে ভালোই মনে হচ্ছে।
আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শাহজালাল ফরাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নবজাতকটির চিকিৎসা আমাদের তত্ত্বাবধায়নে হচ্ছে। তবে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানও আমাদের সঙ্গে তদারকি করছেন। তিনিও সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বেবি অব আদ-দ্বীন নামে নবজাতকটি বর্তমানে হাসপাতালে নিবন্ধিত। তবে নাম কোনও বিষয় না। নবজাতকটিকে সুস্থ করে সুন্দর একটি জীবন উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নবজাতক ও তার মা সুস্থ হলেই আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত হবে। আগে আমরা নবজাতকটির সুস্থতার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা কেউ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চাই না। যারা এর জন্য দায়ী তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসাধীন নবজাতকের মা বিউটি গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, সন্তান ছুঁড়ে ফেলা এবং পরবর্তী বাস্তবতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রমায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। তার শারীরিক সুস্থতার পর কাউন্সেলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঢামেক হাসপাতালের ওসিসির চিকিৎসক বিলকিস বেগম জানান, বিউটি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আমরা তাকে কাউন্সেলিং করব। এছাড়া নবজাতকের পরিচয় নির্ধারণের জন্য ডিএনএ টেস্টের কথা ভাবা হচ্ছে। এসব বিষয় আইনগতভাবে করা হবে।
অপরদিকে, নাবজাতকটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন, নিঃসন্তান গৃহিনী ফাতেহা আক্তারসহ অনেকেই হাসপাতাল ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না পুলিশ ও সমাজ কল্যাণ অধিদফতর। এ বিষয়ে নবজাতকের মায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে নবজাতকটি পুলিশের তত্ত্বাবধানেই থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি দুপুরে রমনার বেইলী রোডের ২৬ নম্বর প্রোপার্টিজ ম্যানশনের ছয়তলার বি-৫ ফ্ল্যাটের বেলকনি থেকে মা বিউটি আক্তার (১৭) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই তার সন্তানকে ছুঁড়ে ফেলে দেন। ওই ফ্ল্যাটের মালিক প্রকৌশলী আজমল হক (৭৩) ও তার স্ত্রী ফিরোজা হক (৫৬)। তারা দুজনে বাসায় থাকেন। আজমল হক পক্ষঘাতগ্রস্ত। তিনি শয্যাশায়ী। তাদের বাসায় বিউটি আক্তার ছাড়াও আয়েশা আক্তার (১৬) নামে আরও এক গৃহকর্মী রয়েছেন। ঘটনার সময় ফিরোজা হক বাজারে ছিলেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ