আজ পয়লা ফাল্গুন

Mominul Islam's photo.
আজ শনিবার পয়লা ফাল্গুন। ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক- আজ চির সুন্দর ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কবির ভাষায় ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন সবই আসে এ বসন্তে। বসন্ত মানেই পূর্ণতা; বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব; বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। এদিকে শহরের নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ আর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে অমর একুশের গ্রন্থমেলা। এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসে সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন আবহের। প্রসঙ্গত ১৯ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষৎ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে।
ফুল ফুটার পুলকিত এ দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর। বসন্ত মানে শুধু প্রেমের মিলন নয়, প্রেমের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নানা রকম সঙ্কা ও সন্দেহ। তাই এমনও মধুর দিনে এমন শঙ্কাও কি জাগে না অধীর প্রতিক্ষায় থাকা কোন মনে- ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে- জানিনে…?’ কবির এ শঙ্কা কাল বাজবে কারো কারো হৃদয়ে।
এবারের বসন্তের সমীরণ বলছে আজ মিলনের দিন। কারণ ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী এক অপরাধীর ফাঁসির রায়। বিচারাধীন রয়েছে আরো একাধিক যুদ্ধাপরাধী। এ দাবিতে শাহবাগ চত্বরের জাগরণ মঞ্চের তারুণ্যের দল রয়েছে সজাগ। তারা সময়ে সময়ে জেগে ওঠে জাতিকে জানান দিচ্ছেন সকল বাঁধা-বিপত্তিকে চূর্ণ করে কলঙ্ক মোচনের ন্যায্য এ দাবি পূরণের জন্যই তাদের এ মিলন।
কারণ এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। বসন্তেই বাঙালি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রাণের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। তাই এ বসন্তে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে এবং ধর্মীয় রাজনীতি চিরতরে এদেশে নিষিদ্ধ হবে। পুনরায় ৭২-এর সংবিধান পুন: প্রতিষ্ঠা পাবে। এ প্রত্যাশায় নবজাগণের জয় হোক।

এই দিনেই অসংখ্য রমনী বাসন্তী রঙে রাঙিয়ে তোলে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী। এ পূর্ণতার বসন্তের দোলা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সকল বাঙালির ঘরে ঘরে। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই কাল গেয়ে উঠবেন- ‘মনেতে ফাগুন এলো..’।
তবে বাস্তবতার পাথর চাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী। কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণচূড়া, আর আমের মুকুলের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে থাকলেও একালের তরুণ-তরুণীরা কিন্তু বসে থাকতে নারাজ। তাই তারা গায়ে হলুদ আর বাসন্তি রঙের শাড়ি জড়িয়ে হাতে হাত রেখে বেড়িয়ে পড়েন। পাঞ্জাবী পড়া তরুণরাও এদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজাতে কম যান না। বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু, তাই সবারই মনে বেজে ওঠে, কবির এ বাণী- ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পয়লা ফাল্গুন আনন্দের দিনে’।

মন্তব্যসমূহ