শুনলে যে কারো অবিশ্বাস্য মনে হবে। কিন্তু মায়ের নিজের স্বীকারোক্তি। নিজ হাতেই খুন করেছেন দুই সন্তানকে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন তিনি। এ কারণে হঠাৎ করেই তিনি নিজের সন্তানদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
মেয়ের কাছে থাকা নিজের ওড়না দিয়েই গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন নাড়ি ছেঁড়া ধনটিকে। মেয়েকে হত্যার পর ঘুমন্ত ছোট্ট ছেলেকেও হত্যা করেন একই কায়দায়। মায়ের এই স্বীকারোক্তি প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারাও।
বিস্মিত হন সবাই। এ কি করে সম্ভব! নেপথ্য কারণ অন্য কিছু থাকতে পারে বলে ধারণা ছিল সবার। একারণে রাতভর চলে জোর প্রচেষ্টা। নানা কায়দায়, নানা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। কিন্তু মায়ের একই স্বীকারোক্তি। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন, এটাই একমাত্র কারণ। পরে অবশ্য আফসোস করেছেন।
বলেছেন, দুশ্চিন্তা উপশমের জন্য যদি মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেন তবে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। দুই সন্তানকে হত্যার স্বীকারোক্তি মা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু রহস্য রয়েই গেল, সঙ্গে অনেক প্রশ্নও। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কি মা তার সন্তানদের মেরে ফেলতে পারেন?
গত সোমবার রাজধানীর রামপুরা এলাকার বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার একটি বাসা থেকে দুই ভাইবোনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে নেয়ার পরপরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত দুই শিশুর মধ্যে ১৪ বছর বয়সী নুসরাত আমান অরণী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইস্কাটন শাখার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আর তার ছোটভাই আলভী আমান (৬) পড়তো হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারিতে। তাদের বাবা আমানুল্লাহ একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী।
আর যেই মায়ের বিরুদ্ধে শিশু সন্তানদের হত্যার অভিযোগ, তার নাম মাহফুজা মালেক জেসমিন। তিনি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও ছিলেন সাধারণ গৃহিণী।
র্যাব সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানসিক অস্থিরতা, সন্তানদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে জেসমিন এ হত্যাকা- ঘটান। হত্যার পর বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে তিনি চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবারের বিষক্রিয়ায় মারা যাওয়ার কথা প্রচার করেন।
জেসমিন একা দুই শিশুকে হত্যার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন মামলার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ।
তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, জেসমিনের একার পক্ষে দুই শিশুকে হত্যা করা কঠিন। ময়নাতদন্তে নাকে-মুখে ও গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে ধরনের আলামত পেয়েছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, একজনের পক্ষে এ হত্যাকা- ঘটানো দুষ্কর। বিশেষ করে ১২ বছরের একটি মেয়েকে চেতনানাশক না খাইয়ে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় না থাকলে একজনের পক্ষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা কঠিন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির ৫/এ ফ্ল্যাট থেকে অচেতন অবস্থায় দুই শিশুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মন্তব্যসমূহ