কিশোরী মোহন গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। স্বপ্ন দেখতো পড়াশুনা করে ভালো চাকরির। ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে অভাব-অনটনের সংসারের হাল ধরার। কিন্তু বখাটেরা সেই স্বপ্ন নিমিষেই ধ্বংস করে দিলো। কয়েকমাস আগে পলি’দের বসবাস ছিলো নগরীর মীরাবাজার এলাকায়। সেখান থেকেই প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া। এরই মাঝে তার দিকে চোখ পড়ে বখাটে স্থানীয় বখাটে সুমন দাশের। পলি রায় জানান, স্কুলে যাওয়া আসার পথে নগরীর মীরাবাজারে সানফেস্ট ফার্নিচারের কর্মচারী সুমন প্রায়ই তার পথ আটকে দিতো। অশালীন আচরণের পাশাপাশি নানা ধরনের কু-প্রস্তাব দিতো তাকে। সুমনের অত্যাচার সইতে না পেরে পলি একদিন কাকা বিপ্লব রায় বিকলকে সব ঘটনা খুলে বলে। পরে বিপ্লব রায় একাধিকবার সুমনের এই আচরণের প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ করেন সানফেস্ট ফার্নিচারের মালিকের কাছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বখাটেদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে প্রায় দু’মাস আগে মীরাবাজার থেকে পলির বাবা সপরিবারে চলে যান মেজরটিলা এলাকার নাথপাড়ায়। পলি জানান, একদিন তাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নেয়ার চেষ্টাও করে সুমন। তার বান্ধবীরা বাধা দেয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে যায় সে। ঘটনা জানার পর গত বছরের ১৫ অক্টোবর সিলেটে কোতোয়ালী থানায় একটি অভিযোগ জিডিভুক্ত করেন পলির বাবা বিশ্বজিৎ রায়। কিন্তু পুলিশ বখাটেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সর্বশেষ, গত ১৫ মার্চ বিপ্লবকে মোবাইল ফোনে মীরাবাজার এলাকায় ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে সুমন, যুবলীগ নেতা জমশেদ সিরাজসহ তাদের সহযোগীরা। এসময় আহত হয় বিপ্লব রায়ের দুই বন্ধুও। ঘটনার পরদিন সুমন, জমশেদ সিরাজসহ ৫জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয় নগরীর কোতোয়ালী থানায়। কিন্তু মামলা দায়ের দুই সপ্তাহ পার হলেও মূল আসামিরা গ্রেফতার হয়নি। যদিও একজন আসামী গ্রেফতারের দাবী করছে পুলিশ। রাজনৈতিক প্রভাবে পুলিশ খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পলির বাবা বিশ্বজিত রায়ের। তিনি জানান, পলিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করার জের ধরেই বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি এর আগে তাকেও হুমকি দিয়েছিলো বখাটেরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামি জমশেদ সিরাজ ১৮ নং ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে চলাফেরা করতো সে। দলের বিভিন্ন কর্মসূচীতে জমশেদ প্রথম সারিতেই থাকতো। পলির স্বজনদের অভিযোগ, এসব কারণেই পুলিশ আসামিদের ধরতে গড়িমসি করছে। এদিকে খুন হওয়ার মাত্র আঠাশদিন আগে বিয়ে করেন বিপ্লব রায়। স্বামী খুনের পর শোক সইতে না পেরে বাবার বাড়ী চলে গেছেন স্ত্রী শুক্লা রায়। আর বিপ্লবের মা, ভাই, ভাতিজীসহ পরিবারের সকল সদস্যই দিন কাটাচ্ছেন ভয় আর আতংকে। তবে, হত্যাকাণ্ডের পরদিন পুলিশ সাংবাদিকদের জানায় ভিন্ন কথা। এলাকায় চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছিলেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমদ।
মন্তব্যসমূহ