আহসান সুমন ♦
একসময় পুলিশ কিংবা যে কোন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখেলে শিশুরা দুরে পালিয়ে যেতো। আদর করে ডাকলেও কখনো কছে আসতোনা। পুলিশই রীতিমতো অন্যরকম এক আতঙ্ক ছিলো কোমলমতি সব শিশুদের কাছে। আর হাতে অথবা কাধে যদি অস্ত্র থাকে তাহলেতো আর বলার কিছুই বাকি থাকেনা। দৌড়ে পালিয়ে মায়ের আঁচলে আশ্রয়। সময়ের আবর্তে এখন সবকিছুর মাঝে ব্যাপক পরিবর্তনের দেখা মিলছে। সবখানে না হলেও দেশের প্রত্যন্ত বহু গ্রামে দেখা মিলে শিশুদের প্রতি পুলিশ সদস্যদের আদর ভালবাসার অনন্য উদাহারন। এখন শিশুবান্ধব পুলিশের অন্তরে মানবিকতার অমুলক ছোয়া লেগেছে। তারা শিশুদের শরীরে লেগে থাকা ধুলোবালির বৈষম্যকে তোয়াক্কা না করে ভালবেসে শিশুদের বুকে টেনে নিচ্ছেন। আদর করছেন নিজের সন্তানের মতো।
এমন একটি বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছেন সালেহ ইমরান নামে বাংলাদেশ পুলিশের তরুণ এক সাব ইন্সপেক্টর। তিনি বর্তমানে রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর উপ-পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে শিশুদের প্রতি ভালবাসার বিরল ছবি দিয়ে কিছু কথা লিখেছেন।
পাঠকদের জন্য পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ ইমরানের স্ট্যাটাসটি হুবুহ তোলে ধরা হলো।
শিশুদের নিয়ে তিনি লিখেছেন “আজ থেকে ওদের কাছে পুলিশ কোন আতংকের বা ভয়ের নাম নয়। চেষ্টা করেছি মামলা তদন্তের ফাকে ফাকে যতটুকু সম্ভব আন্তরিকতা দিয়ে ওদের সাথে কথা বলার জন্য।
প্রথমে দুরে দুরে থাকলেও শেষমেষ একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছে। আর আমিও মনে মনে এটাই চাচ্ছিলাম।
কারণ শিশুদের সাথে সময় কাটাতে যে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। আর ওদের কাছে প্রিয় হতে গেলে যে ওদের সাথে অবশ্যই শিশুসুলভ আচরণ করতে হবে, যেটা ওরা পছন্দ করে!
মামলা তদন্তে গেলে দায়িত্ব বোধের কারণে সেটা পুরোপুরি সম্ভব না হলেও যতটুকু পারা যায় ততটুকুই ওদের সাথে মেশার চেষ্টা করি। ওদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করি!
চেষ্টা করি একটু সুন্দর করে কথা বলে ওদের মনে জায়গা করে নিতে। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা আছে তা দুর করতে।
আমি মনে করি এই দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্যের্।
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, যে শিশুদের নিয়ে আমি ছবি তুলেছি এদের মধ্যেই দুই শিশুর বড়ই খাওয়া নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে মারামারি নিয়ে মাথা ফাটাফাটিও হয়ে গেছে।
শিশুরা কিন্তু ঠিকই সব কিছু ভুলে একসাথে মিশে গেছে। কিন্তু ওদের পিতামাতা ভুলতে পারেনি। সামান্য একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে কত বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে দুইটি পরিবার্।
জানিনা এই প্রতিহিংসার রেশ আগামী কত বছর দুইটা পরিবারকে যন্ত্রণা দেয়।
সকলের প্রতি অনুরোধ আমরা একটু মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকেই মুক্তি পেতে পারি। আর হুটহাট করে মেয়েদের বা নারীদের কথায় কান দিয়ে উত্তেজিত হওয়ার আগে মাথা ঠান্ডা রেখে বিষয়টি কমপক্ষে ১০ বার ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
গ্রাম গঞ্জে এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আছে যা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের কানপড়ার কারণে ঘটে থাকে। কথাটি সকল নারীদের উদ্দ্যেশ্যে নয়”।
মন্তব্যসমূহ