রেশনের চাল-গম নিয়ে পুলিশে অসন্তোষ

অনলাইন ডেস্ক
রেশন হিসেবে চাল-গম প্রাপ্তিতে ওয়ারেন্টি প্রথা বাতিল অথবা শিথিলের দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন দৌঁড়ঝাঁপ করতে করতে ক্লান্ত বাংলাদেশ পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গম-চাল ভালমানের বলা হলেও এখন পর্যন্ত সেই গম ও তা থেকে উৎপাদিত আটা, চাল খাওয়ার অযোগ্য। বেশিরভাগ ভোক্তা এসব বিক্রি করে খোলা বাজার থেকে ক্রয় করছেন। ওয়ারেন্টি প্রথা বাতিল করলে তারা দরপত্রের মাধ্যমে ভালমানের চাল-গম ক্রয় করে সমস্যা নিশ্চিতভাবে দূর করতে পারবে। আর সেনাবাহিনীর মতো ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল করলে গুদাম থেকে পছন্দ অনুযায়ী এসব পণ্য নেয়া সম্ভব।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের লেখা ১৯৯০ সালের একটি চিঠির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর জন্য ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিলের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে অনুসন্ধানে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছরেরও বেশি সময় ভালমানের চাল-গম চেয়ে খাদ্য বিভাগকে প্রচুর চিঠি লিখা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও চিঠি দিয়ে সুবিধা করতে পারেনি। দুই দাবি স্পষ্টভাবে জানানো হলেও বাস্তবায়নে কোনো ধরণের অগ্রগতি নেই। সরবরাহও করা হচ্ছে না ভালমানের চাল-গম।
সূত্র আরও জানায়, গত বছর দেশের প্রতিটি পুলিশ রেঞ্জ, মেট্রোপলিটনসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা উদাহরণসহ চাল-গম-আটাকে নিম্নানের উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠি দিয়েছিলেন। এরপর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত বছরের আগস্টে ভালমানের চাল-গম চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। আগস্টেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের জন্য ভালমানের চাল-গম চেয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই বছরেরই ২৬ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রণালয় দেশের খাদ্যগুদামগুলোয় চিঠির মাধ্যমে জানায়, ‘ওয়ারেন্টির মধ্য থেকেই উন্নতমানের চাল-গম সরবরাতের বিষয়টি গুরুত্বসহ নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
ভালমানের চাল-গম সরবরাহের বিষয়ে এটিই খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে গুদাম বরাবর পাঠানো সর্বশেষ চিঠি। চিঠির ভাষা সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘চিঠির ভাষা সান্তনাসূচক। চিঠি লিখায় এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে- যাতে ঘুরে ফিরে আগেরই অবস্থা প্রতিফলন ঘটছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সমস্যা বলতে বলতে পুলিশ ক্লান্ত। বাধ্য হয়েই ‘লোক দেখানো’ মেনে নেয়া হয়েছে’।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের একটি জেলার পুলিশ সুপার বলেন, চাল-গম নিয়ে প্রচ- রকমের অসন্তোষ রয়েই গেছে। সারাবছরই নানাভাবে আমার কাছে এ নিয়ে আপত্তি আসে। এটা খুবই বিব্রতকর, কোনো সদুত্তর দেয়াও সম্ভব হয় না।
প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার পুলিশ সদস্যের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬২ লাখ ৫০ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল ও ৫৫ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টনেরও বেশি গমের চাহিদা ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬৬ হাজার ৭৪৫ মেট্রিক টন ও ৫৯ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টনেরও বেশিতে।
পুলিশের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারি, বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্সের (এসএসএফ) বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিসহ প্রায় ৩৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি এই চাল-গম পেয়ে থাকেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খাদ্য বিভাগ-পুলিশ বিভাগ, দুটোই সরকারের। একজন আরেকজনের সহযোগী, এখন পুলিশের সঙ্গে যদি খাদ্য বিভাগ এমন আচরণ ত্যাগ না করে পুলিশ কোনো সরগরম পরিস্থিতি করবে না বটে, কিন্তু মনস্তাত্বিকভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হবে। আমাদেরসময়ডটকম।

মন্তব্যসমূহ