জঙ্গিবাদ নিয়ে এরশাদের মন্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া


‘দেশে জঙ্গিবাদ বলতে বিশেষ কিছু নেই। যা ঘটছে তা সবই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এর সঙ্গে রং দিয়ে জঙ্গিবাদ বলা হচ্ছে।’ 
 
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এমন মন্তব্যে রাজনীতিবিদদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে জঙ্গিবাদ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। 
 
বিএনপি এরশাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে নারাজ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলে এ নিয়ে দেখা গেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে প্রসাশন দাবি করেছে, দেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব আছে।
 
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এরশাদের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে বিবার্তাকে বলেন, এরশাদ সাহেব কেন একথা বললেন আমার জানা নেই। তার (এরশাদ ) ব্যাপারে আওয়ামী লীগই ভালো বলতে পারবে। 
 
তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশে জঙ্গিবাদ আছে, এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। জঙ্গিবাদ নিয়ে এরশাদ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করেন রাশেদ খান মেনন।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এরশাদের সাথে একমত প্রকাশ করে বিবার্তাকে বলেন, এখন দেশে জঙ্গিবাদ চিহ্নিতের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা হচ্ছে। এটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে জঙ্গি বলে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। 
 
এরশাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এখন তিনটি বাধা রয়েছে। সেগুলো হলো রাজাকার, জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি এবং রাজাকারের পাহারাদার খালেদা জিয়া ও বিএনপির চক্রান্ত। বিএনপি আমলেই এ দেশে জঙ্গিবাদের উখান হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূল না করা গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব নয়।
 
এদিকে রবিবার র‌্যাব সদর দপ্তরে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে বলেন, র‌্যাব সদস্যরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকারভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। 
 
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার মনে হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জঙ্গিবাদ বলতে আইএসকে বুঝিয়েছেন। যদি আইএসকে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে তার বক্তব্যের সাথে সরকারের পাশাপাশি আমরাও একমত। এদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল জামায়াত। কিন্তু সরকার তা নির্মূল করে দেয়ায়  দেশে এখন জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড নেই।
 
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এরশাদ কী বলল আর না বললো তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তাকে যারা লালন পালন করে সেই আওয়ামী লীগই তার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।
 
এদিকে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মোহাম্মদ খান বিবার্তাকে বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের অবস্থান রয়েছে। জঙ্গিবাদের সাথে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতার একটি চলমান প্রক্রিয়া। জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় কিছু সদস্য এখনও পলাতক আছে।
 
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক-গোলা বারুদসহ একাধিক জঙ্গিচক্রকে গ্রেফতার করেছি। সামনে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে যেন জঙ্গিরা কোনো অপতৎপরতা না চালাতে পারে র‌্যাব সেদিকে কঠোর নজরদারি রেখেছে। 
 

মন্তব্যসমূহ