ঢাকা : রাজধানীতে প্রায়ই মিলছে নবজাতকের লাশ। মূলত ড্রেন, ডাস্টবিন, রাস্তার পার্শ্ববর্তী নির্জন কোনো স্থানে লাশগুলো পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় কুকুরের মুখ থেকেও উদ্ধার করা হয় জীবন্ত শিশু। পরিত্যক্ত অবস্থায় মিলছে জীবিত নবজাতকও। অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে সন্তানের জন্ম হওয়ায় লোকলজ্জার ভয়ে তাদের ফেলা দেয়া হয় রাস্তায় কিংবা ডাস্টবিনে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের হিসাব মতে প্রতিমাসে গড়ে নয়টি নবজাতকের লাশ দাফন করছে তারা। তবে এ সংখ্যা মোট নবজাতকের লাশের ১০ শতাংশ বলে জানান তারা।
নবজাতকের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে সেগুলো ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। কিন্তু ঘটনার তদন্তে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন খুব একটা কাজে আসে না। ফলে ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের ভাষ্য, নবজাতকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কোনো বাদী-বিবাদী না থাকা এবং ঘটনাগুলো ক্লুলেস হওয়ায় তদন্ত কাজের তেমন অগ্রগতি হয় না।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সহকারী পরিচালক (সার্ভিস) আব্দুল হালিম বাংলামেইলকে জানান, প্রতিবছর বেওয়ারিশ হিসেবে গড়ে ৯০ থেকে ১১০টি নবজাতকের লাশ দাফন করেন তারা। তবে এ সংখ্যা মোট নবজাতকের লাশের ১০ শতাংশ বলে জানান তিনি। হাসপাতাল থেকে এসব লাশ তাদের কাছে পাঠানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বেওয়ারিশ নবজাতকের লাশের হার বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বাংলামেইলকে জানান, প্রতি বছর গড়ে অর্ধ শতাধিক নবজাতকের লাশের ময়না তদন্ত করেন তারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হাসান সরদার জানান, নবজাতকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাগুলো একেবারেই ক্লুলেস। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় কেউ অভিযোগও করে না। তাই ঘটনার তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয় না।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাজধানীর পূর্ব বাড্ডায় টি-শার্টে মোড়ানো অবস্থায় ব্যাগ থেকে এক মেয়ে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৪ মার্চ রাজধানীর ধানমণ্ডি ও ভাটার থেকে উদ্ধার করা হয় দুই নবজাতকের লাশ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীর একটি ড্রেন থেকে এবং ৫ ফ্রেব্রুয়ারি হাতিরঝিল থেকে উদ্ধার হয় আরো দুই নবজাতকের লাশ।
এরমধ্যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গত ১ ফ্রেব্রুয়ারি। ওইদিন রাজধানীর বেইলি রোডে নিজ সন্তানকে ছয় তলা থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দেয় বিউটি নামে এক কিশোরী মা। নিজ দুলাভাইয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে সন্তানের জন্ম হওয়ায় লোকলজ্জার ভয়ে সে তার সন্তানকে ফেলে দেয় বলে জানায়। তবে শিশুটি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকদিন পর মারা যায়।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দা জাহানারা। নবজাতকটিকে একটি কুকুর কামড়াচ্ছিল। এসময় শিশুটি কান্না শুরু করলে জাহানারা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। শিশুটির নাক মুখ ও আঙ্গুল কামড়ে দেয় কুকুরটি। চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ওই শিশুটি ফিরে পায় তার নতুন জীবন।
এসব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে নারী যে এখনো নিরাপত্তাহীন এটি তারই প্রমাণ। এ ক্ষেত্রে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর এর দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেই। পুলিশও কোনোভাবে তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে পুলিশ বিভাগ সম্পৃক্ত হয়ে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।’
মন্তব্যসমূহ