নারায়ণগঞ্জে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ১১ ইউপির নির্বাচন, ফলাফলের অপেক্ষায় সবাই

1461385565

কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জালভোট,  ভোট দিতে বাধা, নির্বাচন বয়কট ও কেন্দ্র স্থগিত করা দিয়ে শেষ হলো দেশের তৃতীয় ধাপে নারায়ণগঞ্জের প্রথম ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
শনিবার সকাল থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যেই স্বত:ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে আসে ভোটাররা। এরপর নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টায় সম্পন্ন হয় ১৯৪ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ।
এদিকে সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদ, জেলা প্রশাসক মো: আনিছুর রহমান মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে কাশীপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গাউছুল আজম। এসময় নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন ।
দেশের নির্বাচন মানেই উৎসব। নির্বাচনে ভোট দিতে অনেক লম্বা লাইনও দেখা গেছে।  বয়স্ক লোকদেরও ভোট দিতে দেখা গেছে। এই উৎসবমুখর ভোট কিছুক্ষণের মধ্যে বিষাদে পরিণত হয়। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ভোট বর্জনসহ নানা অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে রূপগঞ্জ ৬৯নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছেন প্রিজাইডিং অফিসার উত্তম কুমার। শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে কেন্দ্রেটির নানা অভিযোগের কারণ দেখিয়ে স্থগিত করেন তিনি। এ কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোট দিতে আসা ভোটারদের ভোট চুরি, ব্যালট পেপার শেষসহ আতংক সৃষ্টি করার জন্য বেশ কয়েটি ককটেল বিস্ফোরণ করার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে প্রিজাইডিং অফিসার উত্তম কুমার বিকেলে কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন।
রূপগঞ্জ উপজেলায় পৃথক স্থানে দুই চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৭জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। আটকরা হলেন, চারিতালুক এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম, মোজাম্মেল হকের ছেলে আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমানের ছেলে খবির হোসেন, আসাদুজ্জামানের ছেলে শরীফ, ছোলেয়মান মিয়ার ছেলে শহিদুল্লাহ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এদিকে বড় ধরনের গোলযোগ না ঘটলেও নানা অনিয়মের কারণে সদর উপজেলার ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে তিনজন নির্বাচন বয়কট করে।
বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম আলমগীর হোসেন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সীল মারাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে শনিবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর সামনে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর হোসেন ভোট বর্জনের এ ঘোষণা দেন। এসময় তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকেই মাসদাইরস্থ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ এনায়েতনগরের ৯ ইউনিয়নের সব কেন্দ্র দখল করে রাখা হয়। আগের দিন রাতেই ব্যালটে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। আমি আমার নিজের ভোট দিতে পারি নাই। আমার ব্যালটে নৌকার সিল মারা ছিল। আওয়ামী লীগের লোকজন এসে কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে।
তিনি আরো জানান, এনায়েতনগর ইউনিয়নে কোনো কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এতে করে নিবর্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে আসতে হয়েছে।
এছাড়া দুপুর ১টায় নির্বাচন থেকে সরে আসেন জাতীয় পার্টির কামরুল ইসলাম তুহিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহিদ হাসান রুবেল।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে তার মধ্যে তিনটিতে নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এছাড়া অপর তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র এনায়েতনগরেই বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এদিকে অনিয়ম-গোলযোগের শঙ্কার মধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর অবস্থানে শনিবারের এই ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার আশা ছিল নির্বাচন কমিশনের। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণে সহিংসতা না হলেও বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে খোদ নির্বাচন কমিশন। দেশের ৬১৪ ইউপির ভোটগ্রহণের অর্ধেক সময় পার করে নিজেদের এই অসন্তোষের কথা জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার। প্রশাসনের সহায়তা না পেলে একা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কিছু করার থাকে না বলেও ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানান তিনি।
ভোটগ্রহণের অর্ধেক সময় পার হওয়ার আগেই দেশের বেশ কিছু এলাকা থেকে নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের তথ্য কমিশনে এসেছে। দৃশ্যমান গোলযোগ-সহিংসতা না হলেও দখল-অনিয়ম বহাল রয়েছে। আর তাই কমিশনের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
এর আগে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ‘বাড়াবাড়ি’ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল নির্বাচন কমিশনের।
উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপে সদর-রূপগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শুরু হয় শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টায়। ১৯৪টি ভোট কেন্দ্রে বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে প্রায় ৫’শ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রায় ৫লাখ ভোটার রয়েছে ১১টি ইউনিয়নে।

মন্তব্যসমূহ