এখন বিশ্ব উষ্ণতায়নের যুগে এগিয়ে চলছে। উষ্ণতা এখন আধুনিক বিশ্বের এক ভয়ঙ্কর শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। গ্রীষ্ম মানেই এখন দাবদাহ। মানুষের হাসফাস, অস্বস্তি । এই অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবীতে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশও বছরে তার উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৫ শতাংশ ব্যবহার করছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শীতলীকরণে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মাসিক বিল এই প্রচন্ড দাবদাহের চেয়েও যেন বেশি অস্বস্তিকর। আমরা কি এই ঝঞ্জাট থেকে কোনো দিন মুক্তি পাব না ? পারব না বিদ্যুৎ ও পানি ছাড়া পরিবেশ শীতল রাখতে?
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অশ্বত্থ রামান ও তার সহযোগীদের মতে, আমরা অদূর ভবিষ্যতে তা পারব। তারা এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন, যা সহ্যক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত উত্তাপ মহাশূন্যে ফেরত পাঠাতে সক্ষম। আর তাতে পাখা, বিদ্যুৎ , রেফ্রিজারেটর বা কমপ্রেসর কিছুই লাগবে না।
তিনি এই কাজে মূলত তাপ বিকিরণের মাধ্যমে শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ঠিক যেভাবে পৃথিবী মহাশূন্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাপ হারায়। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল স্বচ্ছ যার কারণে এই তাপ বিকিরণ সহজে ঘটে। এই বিকীর্ণ তাপের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৮-১৩ মাইক্রন। তারা এমনভাবে যন্ত্রটি বানিয়েছেন, যাতে সেটা পারিপার্শ্বিক তাপ ও আলো গ্রহণ করবে। আর তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে বিকীর্ণ তাপ হিসেবে মহাশূন্যে পুনরায় ফেরত পাঠাবে।
পৃথিবীর শীতলীকরণ প্রক্রিয়া ঘটে মূলত রাতে। তখন তাপের পরিমান বায়ুমন্ডলে কম থাকে। কিন্তু রামানদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি প্রকাশ্য দিবালোকে কাজ করবে। যখন পৃথিবী তাপ গ্রহণ করে। সেটাও আবার বাহ্যিক কোনো শক্তি ছাড়াই!
যন্ত্রটি সিলিকন ডাই অক্সাইড ও হ্যাফনিয়াম অক্সাইড এর সাতটি পর্যায়ক্রমিক স্তর দিয়ে গঠিত। যেটা সিলভারের ১টি প্রতিফলক স্তরের উপর স্থাপিত। প্রতিটি স্তর ভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট পুরুত্বসম্পন্ন। এদের পুরুত্ব ১৩ থেকে ৬৮৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে বিস্তৃত (একজন সাধারণ মানুষের ডিএনএ ২.৫ ন্যানোমিটার পুরু)। এই সুনির্দিষ্ট পুরুত্বসম্পন্ন স্তরগুলো এতে আপতিত প্রায় ৯৭% সূর্যালোক প্রতিফলিত করতে পারে।
এছাড়া এটি অবলোহিত রশ্মিকে স্বচ্ছ বায়ুমন্ডলের কম্পাঙ্কে প্রতিফলিত করে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম। রামান স্ট্যানফোর্ডের একটি বাসার ছাদে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এটা ব্যবহার করেন। সেটা কার্যকর হয়। যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে ছাদের তাপমাত্রা সারা দিন বায়ুমন্ডলের চেয়ে ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম ছিল। যদিও পরিমাণে কম, তবে এতে বাড়তি কোন শক্তি লাগে নি। যন্ত্রের আকারও অনেক ছোট। তবে এতে হ্যাফনিয়াম, সিলভারের মত কিছু মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য ধাতু ব্যবহৃত হয়। এগুলো সচরাচর প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না।
এছাড়াও যন্ত্রের কাজের জন্য ফাঁকা জায়গা দরকার যেখান থেকে আকাশ স্পষ্ট দেখা যায়। তাই এখনই এটাকে হয়ত বাসাবাড়িতে এসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার সম্ভব হবে না। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে ।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও রামান ও তার সহযোগীরা এটা বুঝাতে পেরেছেন যে ,আমরা এখন এই ভয়ংকর শত্রুর সাথে লড়াই করতে মোটামুটি প্রস্তুত। যেটা সীমিত শক্তি, সম্পদ ও প্রাচুর্যের এই গ্রহের মানুষের জন্য হবে স্বস্তিদায়ক ।
মন্তব্যসমূহ