মন্ত্রিত্ব, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে পরীক্ষায় ফেল জাপা!


ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সম্মেলনে দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছিলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় পার্টির জন্য টেস্ট কেস। 
 
এরশাদ বলেছিলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে আমরা সাধারণ নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাই না। পার্টির অবস্থান কী, সামনে কীভাবে আমরা কাজ করব, তার পরীক্ষা হবে এ নির্বাচনে। এই  টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ হবে সংসদ নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত জাতীয় পার্টি।
 
ইউপি নির্বাচনকে জাপা নেতা পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করলেও সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি দলটি। আর এই ব্যর্থতার জন্য সরকারে দলীয় মন্ত্রিত্ব থাকা এবং দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের দ্বন্দ্ব আর এক গুয়েমিকে দায়ী করেছেন দলের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। 
 
ইউপি নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে বিপর্যয়ের পর দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেও দলটির প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। ২য় দফার ইউপি নির্বাচনে জাপার মাত্র চার জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। 
 
জাপার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমনিতেই জাতীয় পার্টিকে মানুষ বিরোধী দল মনে করে না। পার্টির চেয়ারম্যান মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সরকারের মন্ত্রী পরিষদে আছেন তিনজন। তাই দেশের সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টিকে সরকারি দলের অংশ মনে করে।
 
দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী মনে করেন, তারপরও এরশাদ ও  রওশনের দ্বন্দ্ব মানুষ কোনো ভাবেই ভালো চোখে দেখছে না। সাধারণ মানুষ শুধু নয়, দলের নেতাকর্মীরাও আজ দ্বিধাবিভক্ত। তাই উপজেলা, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জাপার ভরাডুবি হচ্ছে। 
 
তারা আরও মনে করেন, যত দিন পযর্ন্ত জাপার চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রীরা সরকার থেকে পদত্যাগ না করবে না, ততদিন পযর্ন্ত জাপার নির্বাচনে ভালো করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া জাপায় স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে দলের কর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে থাকবে। ফলে নির্বাচনী রাজনীতিতে জাপা আরো পিছিয়ে পড়বে। 
 
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে এ পযর্ন্ত ৬২৩ টি ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ৪৪৩, বিএনপি ৬০, জাতীয় পার্টি ৪ অন্যান্য দল ২ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১১৪টি  ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করেছেন।
 
প্রধান বিরোধী দল হয়ে জাতীয় পার্টি মাত্র ৪টিতে জয়লাভ করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাছাড়া এবার বৃহত্তর রংপুরে  অর্ধশতাধিক ইউপিতে নির্বাচনে হয়েছে। রংপুরকে সব সময় জাতীয় পার্টি ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই রংপুরেই জাপার করুণ দশায় হতাশ দলটির নেতাকর্মীরা।
 
২য় দফায় জাতীয় পার্টি ৪ টি ইউপিতে বিজয়ী হলেও প্রথম দফায় নির্বাচনে দলের ফলাফল আরো হতাশাজনক। প্রথম দফায় সারা দেশে ৭১১ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৪টিতে জাপার প্রার্থীরা লাঙল প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছেন। 
 
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ৫৫ হাজার  ভোট পেয়েছেন, যা  প্রদত্ত  ভোটের এক শতাংশেরও কম। এই নির্বাচনে মঞ্জুর জেপি  প্রদত্ত ভোটের দশমিক ৯৭ শতাংশ পেয়েছে। আর এরশাদের জাপা পেয়েছে মাত্র দশমিক ৮৯ শতাংশ। আবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সঙ্গে তুলনা করলে আরো বেহাল দশা এরশাদের জাপার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্বাচনে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। 
 
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। পাতানো নির্বাচন হয়েছে। রাস্তায় কান পাতলে বুঝতে পারবেন মানুষ কী চায়। তাই এই ফলাফল দিয়ে কোনো দলের জনপ্রিয়তা মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
 
জাতীয় পার্টির বিপর্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থীদের সঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে  দেয়া হয়নি। ভয়ভীতি  দেখানো হয়েছে। পেশীশক্তি ও টাকা দিয়ে ভোটকে প্রভাবিত করা হয়েছে। অনেক এলাকায় ভোটকেন্দ্র দখল করে সিল মারা হয়েছে। এই ভোটে জনমতের  প্রতিফলন হয়নি। 
 
ইউনিয়ন পরিষদের এই নির্বাচনে ফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বিবার্তাকে বলেন, নির্বাচনের এই ফলাফল আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমাদের দলে তিন-চারজন মন্ত্রী আছেন। তারা প্রত্যেকে যদি দশজন করেও ইউপি চেয়ারম্যান আনতে পারতেন তাহলেও তো আমরা চল্লিশজন চেয়ারম্যান পেতাম। 
 
তিনি বলেন, তাছাড়া ইতোমধ্যে এ দল অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী করা ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
 
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বিবার্তাকে বলেন, এ পরাজয়ের জন্য আমাদের সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা তো আছেই। তারপর আমি বলবো, নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে প্রচার চালাতে পারেনি। ভয়-ভীতি এবং বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলে হয়তো ফলাফল আমরা আরো অনেক ভালো করতে পারতাম।
 
জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার এ বিষয়ে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড আগে ঠিক করতে হবে। যতদিন আমরা জনগণের কাছে আমাদের রাজনীতি পরিস্কার করতে না পারবো, ততদিন আশানুরূপ ফলাফল অর্জন সম্ভব নয়।
 
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রধান যখন তার স্বাক্ষরিত মনোনয়ন তাদের প্রার্থীকে প্রদান করেন সেক্ষেত্রে প্রশাসনের অসহায়ত্বের কারণে আমাদের প্রার্থীদের পক্ষে সহযোগিতা পাওয়া কঠিন।
 
- See more at: http://www.bbarta24.net/special-report/2016/04/03/27971#sthash.MOEfwt1t.dpuf

মন্তব্যসমূহ