প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডেভিড ক্যামেরনের হুমকি

Hasina-Camerun-P-News

Hasina-Camerun-P-News

মার্চের মধ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না হলে বিমানের ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেবে যুক্তরাজ্য সরকার।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ কথা জানিয়েছেন।
ডেভিড ক্যামেরুন তার চিঠিতে বলেন, ৩১ মার্চের মধ্যে অবস্থার উন্নতির জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হলে পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ, যেমন-বিমানের ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
তবে বুধবার থেকে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি কার্গো পরিবহন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, তিনি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এর স্পিলওভার প্রভাব অন্য দেশের ওপর পড়তে পারে।
মার্চের শেষে যুক্তরাজ্য যে পর্যালোচনা রিপোর্ট দেবে, তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া মেনে নেবে এবং সে অনুযায়ী তারা পদক্ষেপ নেবে।
মেনন জানান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় অনেকদিন ধরে বড় ধরনের খুঁত আছে। গতকাল ব্রিটিশ বেসামরিক বিমান মন্ত্রী তাকে ফোন করে বলেছেন, বাংলাদেশ অনেক কিছু করেছে। কিন্তু এখনও অনেক কিছু করা দরকার আছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী নিদ্ধান্ত নেবে।
মন্ত্রী বলেন,‘অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা যখন সাধ্যের মধ্যে সবকিছু করার চেষ্ঠা করছি,সেই মুহূর্তে তারা এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর কারণ তারাই ভালো বলতে পারবে।’
তিনি জানান, আমরা মঙ্গলবার একনেকে ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার অনুমোদন পেয়েছি এবং নতুন লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার উন্নয়ন আমাদের নিজেদের জন্যই প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
মেনন বলেন, ‘এখনও ঢাকা বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্যের লোকজন কাজ করছে।’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে লন্ডনে সরাসরি কার্গো পাঠানোর ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া গত নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাজ্যের আপডেটে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ কারণে ঢাকা থেকে লন্ডনে সরাসরি কার্গো সার্ভিস পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
আরও বলা হয়, অন্যান্য বিমান সংস্থা যারা ঢাকা থেকে অন্য দেশ হয়ে লন্ডনে পণ্য নিয়ে যাবে তারা যেন লন্ডনে যাওয়ার আগে পরিপূর্ণভাবে এ কার্গো পরীক্ষা করে।
এ জন্য অন্যান্য বিমান সংস্থা এবং আমদানিকারকদের ব্রিটিশ পরিবহন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ।
অক্টোবর মাসে মিশরের শারম আল শেখে রাশিয়ার একটি বিমান বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ২০টি দেশের ৩৮ বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলে। শাহজালাল বিমানবন্দর তার একটি। এই ৩৮টি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে সরাসরি বিমান যোগাযোগ রয়েছে।
‘যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া’ বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ করে আসছে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুক্তরাজ্যকে দায়িত্ব দিয়েছে। ব্রিটিশ এভিয়েশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের লিয়াজোঁ অফিসার জন লাভসে গত নভেম্বরে ঢাকা বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন।
তিনি নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেন। প্রথম রিপোর্টটি শুধু যাত্রী পরিবহন বিষয়ক নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি ফের ঢাকা আসেন এবং দ্বিতীয় রিপোর্ট দেন, যেখানে কার্গো পরিবহন বিষয়ক সুপারিশ ছিল।
যুক্তরাজ্য প্রথম রিপোর্ট দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া এককভাবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়াতে কার্গো সার্ভিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
যুক্তরাজ্যের রিপোর্টে বলা হয়,যাত্রীদের সঠিকভাবে স্ক্যানিং করা হয় না এবং মালামাল ট্যাগ করার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না।
এছাড়া কার্গো রাখার জায়গায় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি কর্মীদের সরিয়ে নিতে বলা হয়, নিরাপত্তা ট্যাগ লাগানোর মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় এবং কার্গো ওয়ারহাউসের বাইরের সব পণ্য ভেতরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ব্রিটিশরা তাদের অভিযোগে বলেছে, বিমান বন্দরে যারা স্ক্যান করেন তারা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকেন, বসে বসে টেলিফোনে কথা বলেন, অন্য লোকের সঙ্গে গল্প করেন, তাদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই।
এছাড়া বিমান বন্দরে এক্সপ্লোসিভ ট্রেসিং মেশিনও কাজ করে না।

মন্তব্যসমূহ