৪ মে পবিত্র শবে মেরাজ

বাংলাদেশের আকাশে ১৪৩৭ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামী ৪ মে বুধবার দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র শবে মেরাজ পালন করা হবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আমজাদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (প্রশাসন) শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফরের উপপরিচালক মো. আবদুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মো. অহিদুল ইসলাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ।

মূলত সূর্যাস্তের পর থেকে ভোর পর্যন্ত পবিত্র শবে মেরাজের রাত। এ রাতেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা শরিফ থেকে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-এর সঙ্গে সপ্তম আসমান পেরিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাক্ষাৎ লাভ করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজের বিধান এ মহিমান্বিত রাতে নির্ধারিত হয়। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে রাতটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

শবে মেরাজ উপলক্ষে মসজিদে বিশেষ দেয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে নফল নামাজ আদায় করে থাকেন। অনেকে নফল রোজাও রাখেন। এ রাতে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি করেন মুসলমানরা। দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে রাতটি পার করেন তারা। দান-সদকাও করেন অনেকে।

মেরাজ শব্দ এসেছে আরবি উরুযুন শব্দ থেকে। উরুযুন অর্থ সিঁড়ি আর মিরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। যেহেতু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠা হয় সেজন্য রাসূলের ঊর্ধ্বগমনকে মেরাজ বলা হয়।

রাসূল (সা.) ২৬ রজব উম্মে হানী বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ জিব্রাইল (আ.) এসে রাসূল (সা.)-কে মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। যেখানে তাঁর বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সিনা মোবারক ধৌত করে শক্তিশালী করেন। তারপর সেখান থেকে তিনি বোরাক নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সব নবীর ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। একের পর এক আসমান অতিক্রম করতে থাকেন।

পথিমধ্যে মূসাসহ (আ.) অনেক নবী রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সপ্তম আসমানের পর বায়তুল মামুরে গিয়ে জিব্রাইল (আ.)-কে রেখে তিনি রফরফ নামক আরেকটি ঐশী বাহনে চড়ে বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন।

বর্ণনায় আছে, রাসূল (সা.) আল্লাহর এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে দু'জনের মধ্যখানে ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। সেখানে আল্লাহ রাসূল (সা.)-এর কাছে জানতে চান তিনি আল্লাহর জন্য কি উপহার এনেছেন। তখন রাসূল (সা.) তাশাহহুদ পাঠ করেন এবং বলেন, এটি আপনার জন্য উপহার হিসেবে এনেছি। আল্লাহ রাববুল আলামিন মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন বিধি-বিধান রাসূলকে উপহার দেন।

মেরাজ থেকে আসার পর এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হলে বিনা প্রশ্নে তা বিশ্বাস করেন হজরত আবু বকর (রা.)। শবে মেরাজ বিশ্বাস করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন আলেমরা।

মন্তব্যসমূহ