একজন শামা ওবায়েদের আসল চেহারা

প্রফেসর ড.শাহেদা (শাহেদা ওবায়েদ) তার একমাত্র কন্যা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে নিয়ে মা দিবসে তার ফেসবুকে এক করুণ কাহিনী লিখেছেন। লেখাটিতে কন্যা শামা ওবায়েদের নাম একটিবারের জন্যও মুখে না আনলেও তার বেড়ে ওঠা, বাবা বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান ও শামার অতীতের সম্পর্ক, একমাত্র কন্যার জন্য একজন মায়ের লড়াই করা এবং আজকের মা-কন্যার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন ড. শাহেদা। প্রফেসর ড. শাহেদার সেই মর্মস্পর্শী ফেইসবুক স্ট্যাটসটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো- আজ, ৮ ই মে ২০১৬, আজ নাকি বিশ্ব মা দিবস! আমার এ দিবসটি নিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে ভীষণ রকম আপত্তি আছে। কারণ আমি মনে করি বছরের প্রতিটি দিনই মা দিবস হওয়া উচিত। যে মা ৯ মাস গর্ভে ধারণ, নিজের রক্ত ও প্রাণ দিয়ে আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, যিনি আমার বাবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যার জন্য আজ আমার সবটুকু অস্তিত্ব, যার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত ও তার জন্য আমার প্রতিটি নিশ্বাস উৎসর্গ করলেও কিছুই করা হয় না। তার জন্য আবার একটি দিবস কি? ৩৬৫ দিনই তার জন্য নিবেদিত। বন্ধরা, আপনারা দেখেছেন প্রতি বছর মা দিবসে আমি এ সম্পর্কিত পোস্ট দিয়েছি। আজ আপনাদের একজন হতভাগা মা এর গল্প শোনাবো। যদি সময় হয় পড়বেন Please: এক মা এর একটি মাত্র কন্যা সন্তান। মা চাকুরী করেন, বাবা রাজনীতি/ব্যবসা জাতীয় কিছু করেন। এবং সে সূত্রে সংসারে একেবারে সময় দিতে পারেন না বা দেন না ও দিনরাত বলতে গেলে বাইরেই থাকেন। অনেক সময় বছরের পর বছর এমন জায়গায় থাকতে বাধ্য হন যেখানে তার স্ত্রী, কন্যা বা পরিবার দেখা করতে হলে অনেক বাধা পার হতে হয়। তাও আবার ১৫ দিন পর পরই এ অবস্থায়; সে মা বহু প্রতিকুলতা পেরিয়ে, বদলির চাকরি করে ও এক মাত্র কন্যাকে অবলম্বন বানিয়ে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ স্কুল, কলেজ পড়িয়ে HSC পাশ করলো সে কন্যাটি কে। কোনো দিন বুঝতেও দেননি তার বাবার অনুপস্থিতি, বা কোনো রকম কষ্ট। HSC পাশ করানোর পর মা এর খুব ইচ্ছা কন্যাকে আমেরিকাতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবে এবং সেভাবে চেষ্টা করতে থাকলো সেই মা। এর মধ্যে সে আদরের কন্যাটি স্বজ্ঞানে জেনে শুনে একটি সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনলো। কন্যার বাবা তো ভীষণ ক্ষেপে গেলেন এবং কন্যার সাথে সম্পর্কই প্রায় রাখবেন না এমন অবস্থা দাড়ালো। কিন্তু মা হাল ছাড়েন নি। তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে কন্যাকে সে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে যত দ্রুত সম্ভব তাকে আমেরিকা প্রবাসী তার মামার কাছে পাঠিয়ে উচ্চতর পড়া শুনার ব্যবস্থা করার জন্য পাগলের মত ছুটোছুটি আরম্ভ করলেন। এদিকে আরেক সমস্যা দেখা দিল, কন্যার বাবা মেয়েকে কিছুতেই আমেরিকা পাঠাতে রাজি না এবং বলে দিলেন তিনি এক টাকাও দেবেন না। বাবা কন্যার মধ্যে সম্পর্ক নেই বললে ই চলে। কিন্তু মা লেগেই থাকলেন এবং অতি সংগোপনে আমেরিকার ভিসা করে কন্যার নানির সাথে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলেন এবং তাকে এগিয়ে দিতে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত গেলেন। কন্যাকে তো পাঠিয়ে দিলেন কিন্তু তার ঘটানো সেই সামাজিক বিপর্যয়ের পরবর্তী মাশুলগুলো দিতে হলো মাকেই। বেচারী নিরবে সব মুখ বুজে সয়ে নিল কলজের টুকরা সন্তানের জন্য। আমেরিকায়, নিজ খরচে, টাকাকে ডলার এ রুপান্তরিত করে পড়া ভীষণ কষ্ট, কিন্তু মা এর যে চাকরি তাতে বাড়তি উপার্জনের কোনো সুযোগ নেই। এটি ১৯৯৩ এর জানুয়ারী মাসের কথা। অগত্যা মা জীবনে যা করেনি, tution পড়ানো আরম্ভ করলেন। গ্রীন রোডে দুটো রুম ভাড়া নিলেন পড়ানোর জন্য। সকাল ৯ থেকে ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত পুরানো ঢাকায় চাকরি স্থল, সেখান থেকে নিজে ডান হাতে গাড়ি চালিয়ে আর বাম হাথে পাশের সীটে রাখা কিছু শুকনো খাবার খেতে খেতে গ্রীন রোডে চলে যেতেন। তারপর ৩-৪ , ৪-৫, ৫-৬ পর্যন্ত তিন ব্যাচ ছাত্রী পড়িয়ে, আবার সেখান থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে মালিবাগ আরেকটি চাকরি করতেন ওতা সেরে বনানী বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯-১০ টা বেজে যেত। একটুও ক্লান্তি নেই মহিলার, কারণ মাথায় তখন একটি মাত্র চিন্তা, যে মেয়েকে আমেরিকায় টাকা পাঠাতে হবে। বাবা কখনো সখনো ২০ টাকা লাগলে ২ টাকা দিতেন। এভাবে চললো দু বছর। তার মধ্যে আবার সেই মা ই বহু কষ্টে ছুটি নিয়ে প্রতি বছর মামার বাসায় থেকে লেখা পড়া করা মেয়ে কে দেখতে, সাহস দিতে ছুটে যেতেন আমেরিকা। পাশা পাশি মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য পাত্র খুঁজতে থাকেন মা। বাবার অবশ্য কোনো চিন্তা নেই, তবে মানুষের কাছে খুব গর্ব করে বলতেন আমার কন্যা আমেরিকাতে Computer Engineer পড়ছে । কিন্তু খোঁজ খবর নেয়া বা আর্থিক দিক নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা ই ছিল না। দু’বছর বাদে মা-ই কন্যার বিয়ে দিলেন আমেরিকায় থাকা Computer Engineering পাশা পাশি বিশাল business man পাত্রের সাথে ১৯৯৪ এর ডিসেম্বর মাসে ও খুব ধুম ধাম সেই বিয়ের আয়োজন এর ৭০ ভাগ ই মা করলেন ও বাবা যেন নিজ কন্যার বিয়েতে সব চেয়ে বড় মেহমান। যা হোক কন্যা তার স্বামীর সাথে আমেরিকা ফিরে গেল। পড়া লেখা শেষ হলো। ইঞ্জিনিয়ার হলো ও সেখানে খুব ভালো চাকরি ও করলো। এর মধ্যে তাদের সন্তানও হলো। এরপর থেকে সেই আদরের মেয়ের রূপ পাল্টাতে আরম্ভও হলো। ১৯৯৮ এ একবার দেশে রাজনৈতিক কারণে সেই মা খুব বিপদে পড়লো, তাও আবার তার স্বামীর কারণে। তখন মা উপায় না দেখে আমেরিকা মেয়ের কাছে চলে গেল। দু মাস পর মেয়ে মা কে বলল “তুমি অমুক স্টেট এ তোমার বন্ধু তাহিয়া আন্টির কাছে চলে যাও” অর্থাৎ সে বিপদে পড়ে আশ্রয় নেয়া মাকে তার বাড়ি থেকে বের করে দিল। বিপদে পড়ে মা অন্য স্টেট এ চলে গেল ঠিক ই, তবে খুব কষ্টে দু মাস বন্ধুর বাসায় কাটিয়ে নিরুপায় হয়ে দেশে ফিরে এলো। ততদিনে সমস্যাটি অনেকটা কেটে গেছে। সেই মেয়ে ১৬ বছর আমেরিকায় থাকলো। তার মা নিজের চাকরির পরোয়া না করে প্রতি বছর মেয়ের এবং নাতিদের টানে আমেরিকা ছুটে যেতো। তবে এ ১৬ বছরে মেয়ের বাবা একবারও মেয়েকে দেখতে আমেরিকা যায়নি। ২০০৫ সালের শেষ ভাগে মেয়ে জামাই সন্তানসহ একেবারে দেশে ফিরে এলো, কারণ মেয়ের শশুর মারা গেছে এবং বিশাল ব্যবসা দেখাশুনা করতে হবে। ইতিমধ্যে মেয়ের বাবাও খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো। তখন থেকেই মেয়ে বাবার জায়গায় রাজনীতি করবে সে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। এর মধ্যে সেই মেয়ের বাবা মারা যায়। বেঁচে থাকতে বাবার সাথে চরম দূর্ব্যবহারসহ বহু ঘটনা ঘটালো। তার যে একজন মা ছিল তা সে তার বাবার মৃত্যুর পর একেবারে ভুলে ই শুধু গেল না, মানুষের সামনে সেই মাকে যাচ্ছে তাই অপমান, অপদস্থ করতে থাকলো। মা মনের এক রাশ কষ্ট নিয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিল ও আজ সেই মেয়ে একটি রাজনৈতিক দলের একটি পদ পেয়ে মনে করে যে সে বিশাল কিছু হয়ে গেছে । গত ৯ বছরে বর্তমানে তার ৬৬ বছর বয়সী অসুস্থ মা এর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে নাই, ফোন করে কোনো খোঁজ ও নেয় না। রাজনীতির কারণে বিভিন্ন সময় টিভি বা এখানে সেখানে সাক্ষাতকারে একটি বারো তার মা এর নামটি উচ্ছারণ করে না, কিন্তু নিজেকে Computer Engineer বলে গর্ব করে। সে ভুলে গেছে যে ক্লাস ৮ পাশ করার পর সে science পড়তে ই চায় নাই, তার বাবা ও তার মত ই ভেবে ছিল যা একটা কিছু পড়লে ই হলো। মেয়ে তো , দুদিন বাদে বিয়ে হয়ে যাবে। তার মা ই রীতিমত যুদ্ধ করে তাকে science পড়তে বাধ্য করেছিল, যার ফলে আজ সে Computer Engineerও একবার ও কি ভাবে না কার রক্ত পানি করা শ্রমে আজ তার এ অবস্থান! সে তো সেই কবে ১৯৯২ তে নিজের সর্বোচ্চ ক্ষতি করে ই ফেলেছিল! তার বাবার তো কোনদিন তার লেখা পড়া, বড় হওয়া, বিয়ের আয়োজন কোথাও কোনো ভুমিকা ছিল না ও কোথা থেকে তুলে এনে তার মা তাকে আজকের অবস্থানের উপযুক্ত করেছে। যে মা এর সন্তান হয় না তাদের অনেক কষ্ট সন্দেহ নেই। কিন্তু যে মা এর সন্তান থাকা সত্ত্বেও সেই সন্তান নিজ স্বার্থের জন্য শেষ বয়সে মাকে চায়ের কাপে পড়ে যাওয়া মাছির মত উঠিয়ে আস্তাকুড়ে ফেলে দেয়, সেই মা এর কষ্ট যে কি, তা যে ভোগ করে সে ই একমাত্র বোঝে . . . . . সন্তান কি এমনই হয় ????? বন্ধুরা, খুব ইচ্ছা হলো এবারের মা দিবসে এ গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। কারো মনে আঘাত লেগে থাকলে জানবেন তা আমার অনিচ্ছাকৃত এবং আমি ক্ষমা প্রার্থী। . . . . . . . শিশু যদি বড় হয়ে মা / বাবার রক্ত, পানি করা রোজগার দিয়ে সমাজের উচু অবস্থানে পৌছে, তারপর, চোখে ছানি পড়ে যাওয়া, শরীর ভেঙ্গে পড়া শেষ বয়সের মাকে একটু ভালবাসা, একটু আবেগে জড়িয়ে রাখা, একটু সময়, একটু গুরুত্ব, একটু সেবা করতে কার্পন্য করে সে মা এর কষ্ট কল্পনা করা যায় কি? জি, অনেকে এ করে থাকে আর তাই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেড়েই চলেছে . . . . . . . .

মন্তব্যসমূহ