ঢাকা : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সারা জীবন মজলুমের জন্য সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
শুক্রবার (১৩ মে) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাপ আয়োজিত ‘ভারতের পানি অগ্রাসন প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’- শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। আগামী ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ভুলে যাচ্ছি। কিন্তু তাকে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। ভাসানীকে ভুলে গেলে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ভুলে যাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘মওলানা ভাসানী ছিলেন কৃষক-শ্রমিক তথা মজলুমের নেতা। তিনি অতি সাধারণ মানুষের মতো চলতেন, কিন্তু অসাধারণ আচরণ করতেন। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ৯৬ বছর বয়সেও তিনি ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
দেশে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘মওলানা ভাসানী সারা জীবন মজলুমের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তার জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দেশে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ জনগণের দাবি আদায় করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘ভারতের কাছ থেকে নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী কখনো সোচ্চার নন। ভারতের পানি আগ্রাসন রুখতে হলে ১৬ কোটি মানুষের ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান সরকার শুধু তাবেদারই নয়, তারা ভারতীয় কৃতদাসে পরিণত হয়েছে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এবার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।এর বিরুদ্ধে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ফারাক্কা, ও টিপাইমুখসহ ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক শক্তির জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর প্রদর্শিত পথই হচ্ছে ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শুধু ভারতকে দিয়েই যাব, বিনিময়ে কিছুই পাবো না- তা হতে পারে না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে সম-মর্যাদার ভিত্তিতে কার্যকরী সম্পর্ক।’
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন- ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশ জাতীয় দল চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (জাফর) যুগ্ম-মহাসচিব এএসএম শামীম প্রমুখ।
প্রসঙ্গ, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ‘মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ’ অভিমুখে হাজার হাজার জনতার লংমার্চ হয়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই দিন বাংলার সর্বস্তরের মানুষের বজ্রকণ্ঠ ভারতের শাসকমহলেও কাঁপন ধরিয়ে দেয়। যার রেশ উপমহাদেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পৌঁছে যায়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত তার একতরফা নীতির আওতায় গঙ্গা তথা পদ্মায় যে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে সেই বাঁধ বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য আজ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২-৭৫ সালে সরকার ভারতকে এই বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়।
মন্তব্যসমূহ