ঢাবি তে পিসিপি দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করায় জগন্নাথ হলে ৫ পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে ৫ পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্রকে মারধর করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতাকর্মীরা। নিজেদের দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করা এবং পিসিপি নোতাকর্মীদের কথা মত না চলার কারণেই তাদেরকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি ও হলে পাহাড়ি ছাত্রদের নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর দুটি আবেদনপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। মারধরের শিকার ছাত্ররা হলেন, অংছিং মারমা, উসাচিং মারমা, বাচনু মারমা, উমংসিং মারমা এবং রোনাল চাকমা। তারা সবাই জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগীরা জানান, গত বছর পিসিপির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হয়। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে বাধ্য করে। সংগঠন না করলে মারধর করে প্রায়ই। সর্বশেষ গত ৫ মে হলে পাহাড়ি ছাত্রদের নবীনবরণের ঘটনার জের ধরে প্রথমে ৪ জন এবং পরে ১ জনকে বেদম প্রহার করা হয়। তারা জানান, প্রতিবছর ঢাবির সব পাহাড়ি ছাত্রদের নিকট হতে চাঁদা তুলে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ হতো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ব শিক্ষার্থী’ ব্যানারে নিরপেক্ষভাবে হত। কিন্তু এ বছর আগের মত সবার কাছ থেকে চাঁদা তুললেও পিসিপি’র ব্যানারে নবীনবরণ করে। পিসিপি চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টুডেন্টস উইং (সম্পূর্ণ রাজনৈতিক) হওয়ায় অন্য পাহাড়ি ছাত্রদের অনেকেই তা মেনে নিতে চায়নি। কারণ হলের এ নবীনবরণ পিসিপি’র ব্যানারে করলে অনেক ভিন্ন দলের সমর্থক (ইউপিডিএফ, সংস্কারপন্থী বা জাতীয় রাজনৈতিক দল) পরিবারের পিতামাতা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে এ প্রোগ্রামে পাঠায় না। ফলে সবাইকে নিয়ে নিরপেক্ষভাবে নবীনবরণ করার উদ্দেশ্য অপূর্ণ থেকে যায়। এজন্য হলে প্রতিবছর নিরপেক্ষ ব্যানারে আয়োজিত এ প্রোগ্রাম এ বছর কেন একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে করা হল তা সমালোচনা করে অংছিং মারমা ঢাবি পাহাড়ি ছাত্রদের একটি গ্রুপে পোস্ট করে। এরপরই গত মঙ্গলবার (১০ মে) গভীর রাতে একটি রুমে হলের সব পাহাড়ি ছেলেদের বাধ্যতামূলকভাবে আসতে বলা হয়। সভায় না যাওয়ার অপরাধে উসাচিং মারমাকে রুম থেকে মারতে মারতে তাদের রুমে নিয়ে যায়। তাকে সেখানে সবাই ঘিরে অত্যাচার চালালে উসাচিং তার পরিচিত মাস্টার্স পড়ুয়া বড় ভাই অংছি মারমাকে বাঁচানোর জন্য কল করে আকুতি জানায়। ৪ জন জুনিয়রকে সাথে নিয়ে অংছিং মারমা আলোচনা করে তাকে আনতে গেলে ঢুকা মাত্রই রুম বন্ধ করে কোন কথা ছাড়াই দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমন মারমাসহ ১০জন পিসিপি নেতাকর্মী অংছিংসহ ৪ পাহাড়ি ছাত্রকে বেদম মারধর করে। একই ঘটনায় গত বুধবার (১১ মে) রাতে রোনাল চাকমা নামে আরেক পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর করা হয়। রোনাল চাকমা ছাত্রলীগ করার অপরাধেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে মারধর করার পর হল থেকে চলে যেতে বলা হয় এবং অন্যথায় আরো খারাপ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয় পিসিপি নেতাকর্মীরা। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে যে, পিসিপি জগন্নাথ হলে তাদের ‘ক্লিনিং ক্যাম্পেইন’ এর অংশ হিসেবেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ‘ক্লিনিং ক্যাম্পেইন’ হল জগন্নাথ হলেকে পিসিপির ভিন্নমতাবলম্বী পাহাড়ি ছাত্রমুক্ত করা। অর্থ্যাৎ যে সকল পাহাড়ি ছাত্র জগন্নাথ হলে থাকে কিন্তু পিসিপির রাজনীতি করেনা, তাদের বিভিন্ন উপায়ে হল ছাড়তে বাধ্য করা। এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবি করে অংছিং ও রোনাল চাকমা পৃথকভাবে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর দুটি আবেদন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড়ি এক ছাত্র বাংলামেইলকে জানান, পিসিপির নেতাকর্মীরা সমগ্র পাহাড়ি ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে হল প্রভোস্ট থেকে সিট বরাদ্ধ নেয়। কিন্তু তাদের দলীয় কার্যক্রম না করলে বিভিন্নভাবে তারা মারধর করে। হলে পর পর দুদিনে পিসিপি’র ভিন্নতাবলম্বীদের উপর হামলার কারণে এখন হলের সাধারণ পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ বিষয়ে সুমন মারমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। পরে কার নেতৃত্বে তাদের মারধর করা হয়েছে জানতে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না।’ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি অভিযোগটি পেয়েছি। পাহাড়ি ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ ঘটনার শিকার অংছিং মারমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে, “হ্যাঁ, আমার ও আমার জুণিয়রদের উপর বর্বর হামলা করা হয়েছে। উপর বর্বর হামলা হয়েছে। আমি এখনও সেড়ে উঠতে পারিনি। ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন কিছুই দিতে যেতে পারছিনা।” প্রতিকারের জন্য কি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “হল প্রশাসনকে ওই রাতেই জানিয়েছিলাম। পরেরদিন লিখিত অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু আজ ৩ দিন পার হলে গেলেও অভিযোগের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। আমি সুবিচার ও যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এখন তাই শঙ্কিত।” ----------------------------------- সংবাদ দাতাঃ উথোয়াই মারমা

মন্তব্যসমূহ