কে হচ্ছেন জামায়াতের আমির? টার্গেট মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান : নীতি-আদর্শেও আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন ।। দেখুন বিস্তারিত…

স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত জামায়াতে ইসলামী এখন অভিযুক্ত এবং বিতর্কিত নেতাদের দলের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দল পরিচালনার দায়িত্বভার ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছে। সে অনুযায়ী নতুন করে নেতা নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় গঠনতন্ত্রের ধারা-১৭-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় আমিরের পদ শূন্য হলে এক মাসের মধ্যে নতুন আমির নির্বাচন করতে হবে। দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর এখন তাই দ্রুত নতুন আমির নির্বাচন করতে চাইছে জামায়াত। শূন্য ‘আমির’ পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরেই। ইতোমধ্যে ওই পদে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন-সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেন ও ঢাকা মহানগরের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। দলটির একাধিক সূত্র জানায়, ৭১-এ বিতর্কিত ভূমিকার অপবাদ ঘোঁচাতে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে চায়। পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করে শক্তিশালী করতে আনুগত্যশীল ভাল সংগঠক নির্বাচন এবং আমিরের পদে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানকে বেছে নেওয়ার ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর আমির ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের কথা ভাবা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার বৈঠকে তিনিই হতে পারেন বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাচিত তৃতীয় আমির। জামায়াতের নির্ভযোগ্য একটি সূত্র জানায়, দুটি কারণে দলের আমির হিসেবে রফিকুল ইসলাম খানকে ভাবা হচ্ছ্।ে এক. তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার বাবা ও চাচারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে তাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পও ছিল। ২.সংগঠক হিসেবে তার সুনাম দলের অন্দরে ইতিবাচক। এ ছাড়াও তিনি আত্মগোপনে থেকে গত সাত বছর ধরে চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা দলটির সাংগঠনিক তৎপরতাও চালানোর অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এসব কারণে পরবর্তী জামায়াতের আমির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রফিকুল ইসলাম খানের। এছাড়া সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদও আমির হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। আমির যিনি হবেন তার নেতৃত্বেই সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমিরসহ অন্যান্য পদের জন্য নেতা নির্বাচন করা হবে। তবে সংগঠনটির নেতাদের কেউ এ ব্যাপারে এখনই সুস্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না। শুধু আমির নির্বাচনই নয়, দলটির নীতি-আদর্শেও মোটা দাগে পরিবর্তন আনা হতে পারে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়েই আগামী দিনে রাজনীতি করতে মনস্থির করেছে তারা। এজন্য দলের গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির আশায় প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গ ছাড়তেও রাজি তারা। জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এরকম আভাস দিয়েছে। এ বিষয়ে জামায়াতের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা বলছেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যে ভুল করেছেন তাঁর দায় নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরা নিতে চায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজা ভোগ বা মৃত্যুদ- কার্যকর শেষে নতুনভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে দলকে। সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হলে নতুন কৌশলে অগ্রসর হবে দল। সে ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে টিকে থাকবে জামায়াত। আর দলের নেতৃত্বে আসবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্ম। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। একই সঙ্গে ত্যাগ করবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের। বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে আগেই নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার সংগঠন হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত বিলটি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আর মন্ত্রিপরিষদে খসড়াটি অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে তা পাস হলে পুরোপুরি অস্তিত্ব হারাবে জামায়াত। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যে ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়া বাকি চারজনই জামায়াতের শীর্ষ নেতা। তারা হলেন দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদ-াদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। তিনি আছেন কারাগারে। সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদ-াদেশ পেয়েছেন দলের আরেক নেতা নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী। কারাগারে থাকা এই নেতার মৃত্যুদ-ের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ পায়নি। পেলে দ্রুতই রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। সেক্ষেত্রে তার মৃত্যুদ- বহাল থাকলে তিনি শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারবেন। আর তা না করলে বা না চাইলে তাকেও ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। জামায়াতের একটি সূত্র বলছে, দলের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক ফাঁসি কার্যকরের পর এখন অনেকটা নেতৃত্বহীনতায় রয়েছে জামায়াত। তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিতেও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়নি। কারণ জামায়াত তৃণমূল পর্যন্ত অনেক সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল। তাই বর্তমানের সাময়িক সংকট একসময় ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে দ্রুত নেতা নির্বাচিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা কমিটিতে কিছু পরিবর্তনও আনা হবে। আর যদি সংগঠন হিসেবেও জামায়াত নিষিদ্ধ হয় তাহলে অন্য নামে বর্তমান নেতাকর্মীরা আবার নতুন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল গঠন করবে। এমতাবস্থায় যথাসম্ভব নতুন কমিটি করার দিকেই এখন মনোযোগী জামায়াত। -উৎসঃ আমাদের সময়

মন্তব্যসমূহ