যে কারণে আটকে আছে ময়মনসিংহ আ.লীগের কমিটি


ময়মনসিংহ: সম্মেলন হলেও ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী  সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত ৩০ এপ্রিল সম্মেলন মঞ্চে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘ঢাকা থেকে শিগগির এ দুই কমিটি ঘোষণা করা হবে’। কিন্তু এক মাস হতে চলল এখনো ঘোষণা করা হয়নি কমিটি।

সূত্রমতে, সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি  অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পক্ষের নেতা-কর্মীরা প্রচার করেছিলেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পরিবর্তে সম্মেলন করে কমিটি গঠন তাদের বলয়ের ঐতিহাসিক অর্জন।

কিন্তু বিধি বাম! সেদিন বুক ভরা হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হয় ‘ঐতিহাসিক অর্জনের দাবিদার’ নেতাকর্মীদের।

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি আটকে থাকার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জানায় দলের সূত্র। তারা জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিবদমান দুই পক্ষকে একীভূত করে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু এখনো এ নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এবার পরিবর্তন আসতে পারে উল্লেখ করে  সূত্র জানায়,  নিজের ছেলেকে মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই দিতে জেলার দায়িত্ব ছাড়তে পারেন ধর্মমন্ত্রী ও বিদায়ী কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান। তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বিদায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। সম্মেলনের দিন অ্যাডভোকেট খোকার অনুসারীরা বিশাল শোডাউন করে মাঠের রাজনীতিতে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার কথা জানান দেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চারিত হচ্ছে বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলমের নামও।

জেলা আওয়ামী লীগের সমীকরণ কিছুটা মিললেও প্যাঁচ খুলছে না মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘিরে। এখানে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু ও ধর্মমন্ত্রীর ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত। দুজনই সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী। সূক্র জানায়, এ দুই নেতার সমন্বয়েই শেষ পর্যন্ত হতে পারে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি।



দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় প্রতিটি কর্মসূচিতে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেয়র টিটু। দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন। দলীয় রাজনীতিতে গতির প্রশ্নে তাকে নেতৃত্বে চান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু বাধ সেধেছে মন্ত্রীর গ্রুপ।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাবা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য নগরী ময়মনসিংহ। এখান থেকেই ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের।

দলটির কোনো কোনো সূত্র বলছে, প্রথমবারের মতো শৈশবের স্মৃতিমাখা নগরীতে দলের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন, কমিটি ঘোষণা করবেন এবং এ নিয়ে  কোনো ধরনের বির্তক হবে এসব বিষয় মাথায় রেখেই তিনি নীরবে হোমওয়ার্ক করেছেন।

অন্য একটি সূত্র দাবি করে, সব পক্ষর সমঝোতা না হওয়ার কারণেই মূলত আটকে আছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা।

এদিকে, সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা না হলেও জেলা ও শহর (মহানগর) আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ফলে জেলা ও সম্ভাব্য মহানগর আওয়ামী লীগ এখন অভিভাবকহীন। দ্রুত কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে বিলুপ্ত শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু বলেন, সবকিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে শিগগরিই ময়মনসিংহ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
=

মন্তব্যসমূহ