মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, বিশেষ সংবাদদাতা
চাঁদপুর জেলার অতি পরিচিত মুখ পেশাদার সাংবাদিক আলম পলাশ দুরারোগ্য জিবিএস (গুলিয়ান বেরি সিনড্রোম) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র কিছুদিন আগে পর্যন্তও তিনি খবরের সন্ধানে চাঁদপুর জেলার আনাচে-কানাচে চষে বেড়িয়েছেন। যেখানে খবরের সন্ধান পেতেন সেখানেই মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে হাজির হতেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের চাঁদপুর প্রতিনিধি।
কিন্তু বিধাতার ইশারায় সদা ব্যস্ত সেই মানুষটির দিনরাত এখন বিছানায় শুয়ে ও হুহল চেয়ারে বসে কাটে। দু’পায়ে দু’কদমও নিজে হাঁটতে পারেন না। পাঁচ আঙুলে মুখে খাবারও তুলতে পারেন না। স্ত্রী অথবা অন্যদের সহায়তায় বাথরুমে যেতে হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শে তার চিকিৎসা চলছে। দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় রাজধানীর খ্যাতনামা চিকিৎসকরা তাকে এ রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। একজন চিকিৎসক তাকে ১২ লাখ টাকা দামের একটি ইনজেকশন শরীরে পুশ করতে বলেছেন।
অন্য চিকিৎসক ওষুধের পাশাপাশি কমপক্ষে ছয়মাস ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। আপাতত দ্বিতীয় পরামর্শ মতো রাজধানীতে বড় ভাইয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসা চলছে তার।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আলম পলাশ জানান, গত ২৫ বছর যাবত তিনি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯২ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ হয়ে প্রথম আলোতে চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করছেন। পাশাপাশি একই গ্রুপের ডেইলি স্টারের পক্ষেও নিয়মিত খবর পাঠাতেন।
তিনি জানান, গত ৯ এপ্রিল ভোরে ফজরের নামাজের জন্য ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি দাঁড়াতে গিয়ে অনুভব করেন হাটুর ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারছেন না। সেদিন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নির্বাচনী খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষয়টিকে প্রথমে আমলে নেননি। দাঁড়াতে কষ্ট হলেও তিনি মনের জোরে মোটর সাইকেলে চেপে ১৫ কিলোমিটার দূরে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। মোটর সাইকেল থেকে নামতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তার পাসহ সারা শরীরই যেন অবশ হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে সহকর্মীরা তাকে ধরে চাঁদপুরের স্থানীয় চিকিৎসককে দেখালে তিনি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও স্যালাইন লিখে দেন।
বাসায় গিয়ে স্যালাইন ও ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। একদিন পরই বিছানা থেকে নামতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। পরিবারের সদস্যরা আর দেরি না করে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে হাই ডিপেনডেন্সি ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা শুরু হয়।
বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা (মেরুদণ্ড থেকে রস নেয়াসহ) শেষে চিকিৎসকরা জানান, তিনি জিবিএস ব্যাধিতে আক্রান্ত। ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ১২ লাখ টাকা দামের একটি ইনজেকশন পুশ করার পরামর্শ দেন। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে খ্যাতনামা দুজন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ দেখান। তারা ওষুধের পাশাপাশি তাকে তিনবেলা প্রশিক্ষিত ফিজিও থেরাপিস্টের মাধ্যমে থেরাপি দিতে বলেছেন।
চাঁদপুর শহরের মোমিনপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও নাজমা আক্তার দম্পতির সাত ছেলে ও দুই বোনের মধ্যে কেবল আলম পলাশই চাঁদপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। তিনি বিবাহিত ও দুই মেয়ে, এক ছেলের জনক। তার পরিবারের সবাই প্রতিষ্ঠিত। তার বড় ভাই দেশের প্রখ্যাত গীতিকার ও সাংবাদিক কবীর বকুল।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে পারিবারিক ঐহিত্য, পরিচিতি ইত্যাদি হিসাবনিকাশ করে আর্থিক দুর্বলতার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন পলাশ। তিনি না বললেও জানা গেছে, ইউনাইটেডে দুই লাখ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে, প্রতিদিন দামি ওষুধ ও ফিজিওথেরাপিস্টকে নগদ টাকা প্রদানে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। যদিও ভাইবোনরা তাকে সহায়তা করছে।
আলম পলাশ সাংবাদিকতায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে ফিরে যেতে চান বলে জানান। ১২ লাখ টাকা দামের ইনজেকশন দিতে পারলে হয়তো দ্রুত ভালো হয়ে যেতে পারেন- চিকিৎসকের এমন আশ্বাসে আশায় বুক বাঁধছেন তিনি।
কিন্তু ১২ লাখ টাকা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও হয়তো টাকার জোগাড় হবে। মুখ ফুটে না বললেও কেউ প্রতিভাবান পেশাদার এই সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ালে আপত্তি করবেন না, তা কথায় বুঝিয়ে দেন। সহৃদয় ব্যক্তিদের কেউ কি আছেন, যিনি পেশাদার এই সাংবাদিকের পাশে দাঁড়াবেন। নাকি টাকার অভাবে তার দুই যুগেরও বেশি সময়ের সাংবাদিকতায় ইতি ঘটবে?
মন্তব্যসমূহ