শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলে ‘গোল্ডেন জিপিএ’ নামে কোনো গ্রেড নেই। মানুষের মুখে প্রচলিত হতে হতে এখন সবচেয়ে ভালো ফলাফলের মাপকাঠি হিসেবে ‘গোল্ডেন জিপিএ’ শব্দটি ব্যবহার হচ্ছে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে আজ। অনেক অভিভাবকই আশা প্রকাশ করছেন তাঁর সন্তান ‘গোল্ডেন জিপিএ’ পাবে। এমনকি গতকাল থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিয়েছেন তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন ‘গোল্ডেন জিপিএ’ পেতে পারে। সবার মুখে মুখে ‘গোল্ডেন জিপিএ’ থাকলেও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নামে কোনো গ্রেডই নেই। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কাগজপত্রে ‘গোল্ডেন জিপিএ’ নামে কোনো শব্দ নেই। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতেও এবং চাকরির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো গ্রেড চাওয়া হয় না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গোল্ডেন জিপিএ নামে কোনো গ্রেড নেই। আসলে লোকমুখে ছড়াতে ছড়াতে এটাই একটা গ্রেডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে—জিপিএ ৫ হচ্ছে সর্বোচ্চ গ্রেড। এটাই সবচেয়ে ভালো ফল।’
তাহলে কিভাবে উৎপত্তি হলো এই গ্রেডের? শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেও এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ওই বছর সারা দেশে জিপিএ -৫ পায় ৭৬ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বিপুলভাবে বাড়তে থাকে। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। বিপুলসংখ্যক জিপিএ ৫-এর মধ্য থেকে কিছু শিক্ষার্থীকে আলাদা করতেই এই গোল্ডেন জিপিএ গ্রেডের প্রচলন। সব বিষয়েই ৮০-এর ওপরে নম্বর পাওয়া ফলই গোল্ডেন জিপিএ হিসেবে অভিহিত হয়ে এলেও শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার ফল নির্ধারণ পদ্ধতিতেও গোল্ডেন জিপিএ নামে কোনো গ্রেড খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৫, লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। এরপর ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৪, লেটার গ্রেড এ। ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫০, লেটার গ্রেড এ মাইনাস। ৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩, লেটার গ্রেড বি। ৪০ থেকে ৪৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ২, লেটার গ্রেড সি। ৩৩ থেকে ৩৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট এক, লেটার গ্রেড ডি। আর শূন্য থেকে ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট জিরো, লেটার গ্রেড এফ। জিপিএ ১ অর্জন করলেই তাকে উত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কোনো বিষয়ে এফ গ্রেড না পেলে চতুর্থ বিষয় বাদে সব বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে গড় করেই একজন শিক্ষার্থীর লেটার গ্রেড নির্ণয় করা হয়।
মন্তব্যসমূহ