আবু ইউসুফ ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি ১৯৭১ সনের ২৫
মার্চ পাক বাহিনী বিপুল শক্তি নিয়ে বাঙালী জাতীর উপর ঝাপিয়ে পরেছিল । তারা চেয়েছিল
বাঙালী জাতী যাতে আর কোন সময় কোন আন্দোলনে মাথা তুলে দাঁড়েতে না পারে সেই
পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতী রুখে দাঁড়িয়েছিল হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং
তাদের বিরুদ্ধে শুরু করেছিল মুক্তিযুদ্ধ । দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে
স্বাধীন করার জন্য সর্বাত্নক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সাথে একত্নতা ঘোশনা করে,৭১ এর,
১৭ এপ্রিল শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকার ৭নং মুল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের খেলু ফকিরের বাড়ীতে
বীর মুক্তিযুদ্ধা আফসার বাহিনী গঠন করেন মেজর আফসার উদ্দিন আহামেদ। সাহশি বীর
যুদ্ধা মেজর আফসার উদ্দিন আহামেদের নেতৃত্বে। সাত জন্য সঙ্গী নিয়ে আফসার বাহিনী
গঠন করা হয়,
২৪-৪-৭১-সেনাবাহিনী,ইপিআর,আনসার
বাহিনীর ফেলে দেয়া রাইফেলকে সম্বল করে। কাদের সিদ্দিকীর (বীর উওম) নেতৃত্বে পাহাড়ী
এলাকায় গড়ে উঠে বিরাট এক মুক্তি বাহিনী । যা পরবর্তীতে কাদেরীয়া বাহিনী নামে
পরিচিতি ঘটে । কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক খন্ড সংঘর্ষ ঘটে পাক বাহিনী
ও রাজাকারদের সাথে । প্রথম দিকে বল্লা রণঙ্গনের যুদ্ধেই তাকে যুদ্ধের নেতৃত্বদানের
জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা এমে দেয়। ৭১ এর ১২ জুন এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের
নেতৃত্বে বল্লাতে পাক-বাহিনীর সাথে এটাই প্রথম সংঘর্ষ । কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে
মুক্তিযোদ্ধার একটি দল গঠিত হয়, ঐ আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে ভালুকাতে একটি দল যদিও
তার সংখ্য নগণ্য । সবাই একত্রিত হয়ে বল্লাতে পাক সেনাদের মোকাবেলা করার জন্য। পাক
বাহিনী ৭০-৮০ জনের একটি দল ঐদিন সকালে কালিহাতি থেকে হেটে বল্লার দিকে রওনা হয়।
বল্লার কাছে চারানের নিকটবর্তী হলে মুক্তি বাহিনীর নজরে পড়ে এ দলটি ।
মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বাহেই পজিশন নিয়ে বসে থাকে । বল্লার কাছাকাছি পৌছা মাত্র তিন
দিক থেকে সাড়াশী আত্রুমন চালায় । এ যুদ্ধে ২০/২৫ জনের মতো পাক সেনা আহত হয়। নিহত বেশ
ক,জন ৪টি লাশ ফেলে রেখে তারা পশ্চাদ ধাবন করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পাক সেনাদের ৪টি
লাশ যখন বল্লা বাজারে নেয়া হয় । তখন বল্লার জনতার মধে্য অভাবনীয় একটা দৃশে্যর
অবতারনা দেখে যায় । মানুষের মধে্য যে এত প্রচন্ড ঘৃনা এ লাশ দেখে হতে পারে তা
পূর্বে কল্পনাই কারা যায় নি হাজার মানুষ শুধু মুখে থুতু নিক্ষেপ ও পায়ের একটা লাথি
মারার জন্য ভীর করতে থাকে । তাদেরকে সরিয়ে দিয়েও বা বাধা দিয়েও দেখা যায় ঘন্টা
খানেকের মধে্য শুধু মানুষের থুতুতে লাশের গোসল হয়ে গেছে । আর কত যে লাথি গোতা
পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই । বল্লা রণাঙ্গনের বিজয়ের মুক্তিযুদ্ধের জয় লাভের জন্য সুদূর
প্রসারী ফল লাভ করে । ৭১ এর ২৫ জুন আফসার বাহিনী মেজর আফসার উদ্দিন আহামেদের নেতৃত্বে
আফাসার বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধারা পাক সেনাদের আগমণের বার্তা পৃর্বেই অবগত হয়ে
ভালুকার ৯ কিলোমিটার পৃর্বে শান্তিগঞ্জ নামক স্থানে অর্থাৎ সতোয়া নদীর পশ্চিম পার
থেকে বাধা প্রদান করে আক্রমণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে
দ্ররত অগ্রসর মান হানাদার বাহিনীকে ঠেকানো মম্বব নয় মনে করে মুক্তিযুদ্ধারা ক্ষুদ
দলটি তাড়াতাড়ি পিছু হটে গিয়ে ফেরী নৌকায় ভাওয়ালিয়াবাজু ঘাট পার হয়ে অতি গোপনে
খালের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থান নেয়।
অপরদিকে হানাদার বাহিনী বিনা বাধাই সুতোয়া নদী পার হয়ে শাক্তিগঞ্জ, ধীতপুর
হয়ে ভাওয়ালিয়াবাজু ঘাটের পূর্বে তীরে এসে খাল
পার হওয়ার জন্য ভীড় জমাতে থাকে । এমতাবস্থায় খালের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থানরত
মুক্তিযোদ্ধাদের লাইট মেশিন গান ও রাইফেল গর্জে উঠে । ইহাতে যে সকল পাক সেনারা
নীচে অর্থাৎ খালের পাড়ে নেমেছিল তাদের একজও জীবিতাবস্থায় উপরে উঠেতে পারেনি। খালের
পূর্ব পারে অবস্থানরত পাক সেনারা পজিশন নিয়ে অবিরাম গুলি বর্ষণ করতে থাকে ।
বৃষ্টির মতো ভারী মেশিন গানের গোলাবর্ষণ যুদ্ধরত এলাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়
আতক্মের সৃষ্টি করলেও দেশ প্রেমিক জনগণ যুদ্ধ জয়ে নানাবিধ সাজাযে্য এগিয়ে আসতে
থাকে । মুক্তিযোদ্ধা দলটি সংখ্যায় অপ্ল হলেও পাক সেনাদের ভারী অস্ত্রের গোলা বর্ষণ
তাদেরকে পিছু হাটাতে পারেনি। আফসার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতা নিয়ে
যুদ্ধ করতে থাকে । বেলা ৯ টায় যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর বেলা ১০ টায় বাহিনীর অধিনায়ক
মেজর আফসার উদ্দিন আহামেদ সাহেব ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধার ১ টি দল নিয়ে যুদ্ধে যোগদান
করেন । ফলে যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয় । শুরু হয় অবিরাম গুলাবর্ষণ । পাক সেনাদের ভারী অস্ত্রের গুলাবর্ষণ
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যেন একেবারে বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাই বেলা ১১ টার
পর টিকে থাকার প্রশ্নে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা রণকৌশল পাল্টিয়ে পজিশন মজবুত ও
সুদৃঢ় করে নেয়। অপরদিকে গোলাবারুদের পরিমাণ লক্ষ্য করে যাহাতে অপচয় রোধ করা যায়
সেদিকেও সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় । ২৬-৬-৭১ ইং যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে আফসার
বাহিনীর আঃ মান্নান নামে একজন প্রিয় মুক্তিযোদ্ধাকে হারান। ঐ দিনেই আহত হন হোসেন
পুর থানার আফাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, গফরগাঁও থানার বারবাড়িয়া গ্রামের মোস্তফা কামাল,অত্র
ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল । এতে ১৯৫ জন পাক সেনা নিহত ও
বহু সংখ্যক আহত হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, নগণ্য সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার হাতে
এতো অধীক সংখ্যক হানাদার সৈন্য মারা পড়ল কেমন করে? ঐ প্রসংগ্য, মেজর আফসার উদ্দিন
আহামেদের বড় ছেলে যুদ্ধ কালিন কম্পানী কমান্ডার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভালুকা
উপজেলার সাবেক ডিপুটি কমান্ডার জাগ্রত বাংলার সম্পাদক মরহুম গাজী মোঃ খলিলুর রহমান
লেখেগেছেন, এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যে, হানাদার বাহিনীর জন্য যুদ্ধটা ছিল
আত্রুমণাত্নক। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ যুদ্ধ ছিল আত্নরক্ষাত্ব । তাই যুদ্ধ
চলাকালীন অনেক সময়ই দেখা গেছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ১ টি গোলাও ছোড়া
হচ্ছেনা । তখন পাক সেনারা নিশ্চিত ধারণা করছে যে, মুক্তিযোদ্ধা দল আহত,নিহত নতুবা
পিছু হটে গেছে। এমতাবস্থায় পাক সেনারা পুনরায় খাল পার হওয়ার জন্য প্রস্ততি প্রর্ব
শুরু করে দিয়েছে। অনেকেই খালের পারে নিচে নেমে গেছে। আবার অনেকেই পশিজন ছেড়ে
দাঁড়িয়ে গেছে বা হাটাচড়া করছে । এভাবে পুনঃপুনঃ হানাদার সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের
কাছে মারা পড়েছে । এখনে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সম্মুখ দিক দিয়ে খাল পার হওয়া
সম্ভব নয় মনে করে হানাদার বাহিনী পিছন দিকে ধলিয়া নামক স্থানে ছত্রী সৈন্য নামিয়ে
মুক্তিযোদ্ধাদের ছত্র ভঙ্গ করতে বাধ্য করে । মুক্তিযোদ্ধারা নানা দিক দিয়ে খাল
বিল, নদী-নালা সাঁতরিয়ে বন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে মল্লিক বাড়ী জমায়েত হয়। ভাওয়ালিয়াবাজু
দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা যুদ্ধে যাহারা শহীদ ও আহত হয়েছিলেন তাদের নাম, ভালুকা মুল্লিকবাড়ীর
আঃ মান্নান শহীদ, হোসেনপুর থানার আহত আফাজ
উদ্দিন ভূঁইয়া, গফরগাঁও থানার বারবাড়িয়া ইউনিয়নের আহত মোস্তফা কামাল,ভালুকা থানার
ভরাডোবা ইউনিয়নের মনির উদ্দিন,
মন্তব্যসমূহ