টাকা দিয়ে সালেহ ইমরানদের কিনা যায় না


আমার ছোট্ট চাকুরী জীবনে এ রকম ঘটনা এই প্রথম। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল আশেপাশের পরিবেশ। এক টুকরো মাটিও নেই এই অসহায় পরিবারটির। থাকে পরের বাড়ি। পরিবারের ভরণপোষণ আর ৫ টা সমিতির কিস্তি চলতো এই দোকানের আয় দিয়ে।
কতটা কষ্ট পেলে আর ক্ষতিগ্রস্থ হলে পরে এই লোকগুলো জনসন্মুখে এভাবে হাউ মাউ করে কাদতে পারে। সত্যি বলতে, ওদের চোখের পানি দেখে আমার চোখ দুটোও অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম।
গ্রাম্য একটি প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তের শিকার এই নিরীহ, অসহায়, হত দরিদ্র পরিবারটি। যেদিন মামলাটি তদন্ত করে আসছিলাম সেদিনও আবার এই অসহায় পরিবারটির উপর হামলা করা হয়েছিল।
আমার কাছে ফোন করে কাদতে কাদতে বলছিল, স্যার ওরা আমাদের মারতেছে। আমাদের বাচান স্যার। ঘটনাটি যেহেতু আমার এখতিয়ার এর বাইরে মানে থানা পুলিশের কাজ। তাই সেই থানায় ফোন করতে বললাম।
আমার পরিচিত একজনকেও ওদের সহযোগিতা করতে বললাম।লোকগুলো মার খেয়ে রাত একটা পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে আটকা ছিল।রাস্তায় দাড়িয়ে দম্ভোক্তি করছিলো ওরা। থানায়ও যেতে পারছিল না। শেষে রাত প্রায় দুইটায় লুকিয়ে থানায় যায় ওরা। অভিযোগ দিতে চায়।
থানা থেকে জানানো হয়, আগে চিকিৎসা নেন। পরে অভিযোগ নেওয়া যাবে। ঠিক ঐ সময় আমাকেও ফোন দেয় এই অসহায় পরিবারটি। সত্যি বলতে আমি লজ্জা বোধ করি।
ওদের সান্ত্বনা দিয়ে বলি , আগে চিকিৎসা টা জরুরি! আপনারা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে দেখা যাবে। প্রয়োজনে কোর্টে মামলা করেন। আপনার এই মামলাও তদন্ত করব। আপনার একটি পয়সাও লাগবে না।
মনে মনে শপথ করি, নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ওদের পক্ষে লড়াই করব। লড়াইটা হবে কলমের মাধ্যমে। হ্যডাম ওয়ালা আসামিদের দুই একজন হ্যাডাম ওয়ালা লোক নিয়ে পরের দিন আমার সাথে দেখা করলেন।
প্রচন্ড রাগে আর ক্ষোভে ফুসছিলাম তখন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম, টাকা দিয়ে হয়তো থানা পুলিশের কাউকে কাউকে কিনে নিতে পারেন। আর তার জন্য এতো গরম দেখান তাই কি! পারেন তো আমাকে কিনে ফেলেন। দেখি কত ক্ষমতা আপনাদের!
বললাম ,লোকটাকে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসার পর আবার মারলেন কেন! আমতা আমতা জবাব তাদের্।
মুখের উপর সোজা বলে দিয়েছি , লোকটার কাছ থেকে আপোষ করতে পারলে ভালো। নইলে আমার যতটুকু মেধা আর ক্ষমতা আছে তার সর্বোচ্চটা দিয়ে এই মামলাটা লিখব আমি।
চেষ্টাও করেছি তাই। আমার সিনিয়র স্যার তদন্তের ফলাফল দেখে সন্তোষ্টিও প্রকাশ করেছেন। বাকিটা আদালতেই হবে।
আমারই কয়েকজন জাত ভাই এই মামলার ব্যাপারে আসামীদের পক্ষ হয়ে সুপারিশ করেছিলেন। সুপারিশ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবও। সরি বলা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।
এটা তো একটি নির্যাতীত অসহায় পরিবারের আর্তনাদ! এরকম কত শত অসহায় পরিবার যে প্রতিনিয়ত বিচারের অভাবে থানার বারান্দায় গিয়ে একটু বিচারের জন্য আমার মত পুলিশের একটু সহযোগিতা চেয়ে মলিন মুখে চোখ মুছতে মুছতে ফিরে আসছে সেটা কি অস্বীকার করতে পারবেন!!!
ক্ষমতাবানদের একটা ফোন পেয়ে তো আমরা কত কিছুই করে দেই। কিন্তু যাদের চোখের পানি আর সৃষ্টি কর্তা ছাড়া এই জগতে আর সান্ত্বনা দেবার মত আর কেউ নেই তাদের জন্য আমি বা আপনি কি কিছু করার চেষ্টা করেছি কখনো? ??
মনে রাখবেন , ন্যায় বিচার বঞ্চিত এইসব অসহায় মানুষদের চোখের জলের নীরব ভাষা কখনোই বৃথা যায় না। এদের চোখের জলের অব্যক্ত কথা অভিশাপ হয়ে সৃষ্টিকর্তার লানত হয়ে পড়বে আমার মতই কারো উপর্।
আর সেই লানত যখন চোখের জলের মাধ্যমে মাটিতে গড়িয়ে পড়বে তখন তা মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যাবে নিশ্চিত থাকেন।
আর যদি এরকমটি হয়েই যায় ,এরকম একটি পরিবারের অভিশাপেই আপনার জীবনের সমস্ত সুখ শান্তি কেড়ে নিয়ে দুনিয়াটাকেই জাহান্নাম বানিয়ে দিতে পারে। যতই গাড়ি বাড়ি আর কোটি টাকার মালিক হোন না আপনি।
মানুষের সেবা করার পারফেক্ট জায়গা হচ্ছে থানা। থানায় থেকে একজন মানুষকে যতটা সেবা করা যায় পুলিশের অন্য কোন ইউনিটে থেকে তা করার সুযোগ নেই।
কিন্তু দুঃখ জনক হলেও থানা পুলিশে কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশের কারণে জনগণের সেবক এবং রক্ষক পুলিশ সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে ভক্ষকরুপে।
আমার সহকর্মীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে দয়া করে এরকম অসহায় মানুষগুলোর প্রতি নির্দয় হবেন না। অবিচার করবেন না। এই পরিবারটি এখন ভয়ে আছে তাদের না আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়। অলরেডি একটি মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি।

মন্তব্যসমূহ