এইচ এম মোমিন তালুকদার – ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সরকার সারাদেশে মহাসড়কে থ্রী-হুইলার, অটো টেম্পু ও সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেও ত্রিশালে টেম্পু ও সিএনজি চলাচল এখনো বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে ত্রিশাল থানা পুলিশের ব্যাপুরুয়া ঘোষ বাণিজ্যে, তাদের সহায়তায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল এলাকায় দেদারছে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত থ্রী-হুইলার, অটো টেম্পু ও সিএনজি। এর ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা, প্রাণ হাড়াচ্ছে শতশত মানুষ।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার প্রায় এক বছর পূর্বে সারাদেশে মহাসড়ক গুলোতে সড়ক দূর্ঘটনা রোধ কল্পে থ্রী-হুইলার, অটো টেম্পু ও সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। এবং সরকারের এই সিদ্যান্তকে বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ প্রসাশনকে কঠোর নির্দেষনা দেওয়া হয়। এরই দ্বারা বাহিকতায় ত্রিশাল থানা পুলিশ ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল এলাকায় অটো টেম্পু ও সিএনজি চলাচল কিছুদিন বন্ধ রাখার নাম মাত্র চেষ্টা চালায়। এতে করে ত্রিশাল থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান অটো টেম্পু ও সিএনজি থেকে মাসিক বরাদ্ব কৃত টাকা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে বিন্ন পথ অবলম্বন করে। অভিযোগ উঠেছে সরকারের সিদ্বান্তকে উপেক্ষা করে ত্রিশাল থানার ওসি মনিরুজ্জামান কিছু সংখ্যাক সিএনজি তিন থেকে চার হাজার টাকা মান্থলী নিয়ে মহসড়কে চলা চলের অনুমতি দেয়। এ ছাড়াও ওসি মনিরুজ্জামানের অনুমতি ব্যাতিত যে সকল সিএনজি, টেম্পু ও থ্রী-হুইলার চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে প্রতিমাসে শতাাধিক সিএনজি, অটো রিক্সা ও থ্রী-হুইলার জাতীয় গাড়ী আটক করা হয়। কিন্তু আটককৃত গাড়ীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিয়ে প্রতিটি গাড়ী তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গাড়ীর একাধিক মালিক জানান, ওসি সাহেব গাড়ী থেকে ঘুষের টাকা যেভাবে আদায় করেন মনে হয় এটা তার নেয্য পাওনা। অপর দিকে ত্রিশাল থানা পুলিশ উপজেলার মহাসড়ক এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপুষ্টের নামে সিএনজি, অটো টেম্পু ও থ্রী-হুইলার আটক করে প্রতি গাড়ী থেকে জোরপূর্বক দুইশত, তিনশত ও পাঁচশত টাকা আদায় করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল এলাকায় অটো টেম্পু, সিএনজি ও থ্রী-হুইলার চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ শহর দূরপাল্লার যানবাহন ফোরলেন হওয়ার পর নির্দ্বিধায় গাড়ী চলাচল করতে গিয়ে ত্রিশাল এলাকায় সিএনজি ও থ্রী-হুইলার গাড়ীর বাধার সম্মুক্ষীন হতে হয়।
এর মধ্যে ত্রিশাল এলাকায় সিএনজি, অটো রিক্সা চলাচল বন্ধ না হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। এতে কয়েক মাসেই প্রাণ হাড়িয়েছে প্রায় অর্ধশত মানুষ। বিশেষ করে গত ৬জুন ত্রিশাল পৌরশহরের ৭নং ওয়ার্ডের ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুটি অটো রিক্সাকে ট্রাকে ধাক্কা দিলে এক স্কুল শিক্ষিকা সহ ৩ জন নিহত ও আহত হয় অন্তত্য ৫ জন। এর ‘দু’ সপ্তাহ পূর্বে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের রাগামাড়া বাজারে এক সিএনজি ও অটো রিক্সায় যাত্রী উঠা নামার সময় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গামী একটি কুষ্টাড় ধাক্কা দিলে দু’জন নিহত হয়। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালে বৈলর বাঁশকুড়ি নূরুর দোকান নামক স্থানে ৬মে মটোরসাইকেলকে থ্রী-হুইলার ধাক্কা দিলে এক জনের মৃত্যু হয়। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কানহর বাজারে গত ২৮মে সড়ক দূর্ঘটনায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরকম প্রায় অসংখ্যা সড়ক দূর্ঘটনা ঘটলেও ত্রিশাল থানা পুলিশের কোন টনক ঘটছে না। মহাসড়কে অটো টেম্পু ও সিএনজি চলাচল বন্ধের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না ত্রিশাল থানা পুলিশ।
এই সকল বিষয় নিয়ে বৈলর বাসস্টেন্ড এলাকায় সড়ক নিয়ন্ত্রন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, সরকার সিএনজি, টেম্পু ও অটো রিক্সা নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেও পুলিশের কারনে আমরা তা বন্ধ করতে পারছিনা। কারন আমরা বন্ধ করলেও পুলিশ টাকা খেয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ এসকল গাড়ী চলাচলের সুযোগ করে দেয়।
বৈলর এলাকার টেম্পু চালক আবুল হুসেন জানান, পুলিশ দারগা সিএনজি, বেবী-টেক্সী আর অটো রিক্সা ধরে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরে চার-পাঁচ হাজার করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও তিনি আরও জানান, স্টেন্ড বাদে মহাসড়কের ফাকা যায়গায় যেমন নূরুর দোকান, সালামের দোকান এই সকল যায়গায় গাড়ী দরে ড্রাইভারদেরকে হুমকি ধুমকি দেয়। পরে ড্রাইভরের কাছ থেকে একশত, দুইশত ও তিনশত টাকা নিয়ে গাড়ী ছেড়ে দেয়। সত্যি কথা বলতে পুলিশ টাকা খেয়ে রোডে গাড়ী চলতে দিচ্ছে।
বিশ^বিদ্যালয় মোড় নওধার জিরো পয়েন্ট এলাকার মাহাবুব জানান, প্রায় এই মোড়ে পুলিশ চেকপুষ্ট বসায়। মহাসড়ক এলাকায় সিএনজি নিষিদ্ধ থাকা সত্যেও পুলিশ চেকপুষ্টে বসে সিএনজি ও অটো রিক্সা আটকিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।
জিরো পয়েন্ট এলাকার মোঃ ইমন জানান, প্রায় প্রতিদিন সন্ধার পর এই মোড়ে পুলিশ এসে দাড়াঁয়। সিএনজি আসা মাত্রই দাড় করিয়ে জিজ্ঞাসা বাদের নামে চালকদেরকে সাইডে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসকল দৃশ্য প্রায় নিত্তদিনের ঘটনা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক সিএনজির মালিক জানান, আমি চার হাজার টাকা প্রতি মাসে মান্থলী দিয়ে রোডে গাড়ী চালাই। তারপরেও পুলিশ মাঝে মধ্যে আমার গাড়ী আটকাতে চায় পরে ওসি সাহেবের সাথে কথা বললে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমার গাড়ী ছাড়াও আরও কয়েকটি গাড়ী মান্থলী দিয়ে এই রোডে চলাচল করে।
সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত স্কুল শিক্ষিকা ফেরদৌসি আক্তারের ছোট ভাই দেলোয়ার হুসেন শামীম জানান, সরকার মহাসড়কে থ্রী-হুইলার অটো টেম্পু ও সিএনজি চলাচল বন্ধ ঘোষনা করলেও ত্রিশালে তা এখনো কার্যকর করা হয়নি। যদি সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে আমার বোনের এই দূর্ঘটনার শিকার হতে হতো না।
ত্রিশাল থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের কাছে এই সকল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিব করেননি।
মন্তব্যসমূহ