বছরের বেশি সময় ধরে ফেজবুকে একটি প্রোগ্রাম দেখছি, এই সম্পর্কে ধারণা খুব একটা ছিলনা, পরে ময়মনসিংহ এর সাংবাদিক বন্ধু, কিছু ছাত্রছাত্রী ও সচেতন মহলের সাথে কথা বলে এই সচতনতামুলক প্রোগ্রামের কিছুটা ধারণা পাই। যারা অনেকদিন ধরে ফেজবুকে আছেন অথচ এই সচেতনতামূলক কর্মসূচী সম্পর্কে ধারনা নেই, একটু কষ্ট করে পড়ুন কাজটি যত সহজ মনে হয় তত সহজ নয়। এই প্রোগ্রামের উদ্যোক্তা ময়মনসিংহ এর সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহাম্মদ আল মামুন এর একান্তই ব্যক্তিগত আন্তরিকতা, অনেক পরিশ্রমের ও অনেক সময়ের ভাবনা নিয়ে কৃতকাজ। তাঁর ফেজবুক স্ট্যাটাস অবলম্বনে ও ফ্রেশ নিউজ এর প্রতিনিধি এর সংগ্রহকৃত তথ্য দিয়ে এই রিপোর্টটি করা হলোঃ
” Awareness build up করা কত যে কঠিন কাজ তা বুঝেছিলাম পুলিশে আসার আগে একটি এনজিও তে অফিসার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে, টাকা-খাওয়া তারপরও মানুষ কথা শুনতে চায়না, আর বিদেশে যখন মাস্টার্স করি, সেখানে এক বিখ্যাত রেস্টুরেন্টের এক শেফ এর রান্না সবাই পছন্দ করতো, এক মিডিয়ার ইন্টার্ভিউতে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, আপনার রান্না এত বিখ্যাত কেন? আপনি রান্নায় কি এমন দেন যে সবাই পছন্দ করে, তখন ঐ শেফ রিপ্লাই দিয়েছিলেন, আমি নতুন কিছুই দিই না, তবে রান্নার প্রতি আমার আন্তরিকতা আর ভালবাসার কমতি নেই, আর এর পিছে শ্রম ও সময় দিই”। আমার এ “Students’/Guardians’ Awareness Program” কে উদ্দেশ্য করেই তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন”।
*জাপানিরা দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত “A mission with a difference” এই রিপোর্ট ও কার্যক্রম দেখে বাছাই করেন “কাইযেন রোল মডেল” হিসেবে “Students’/Guardians’ Awareness Program” কে- যা Students’/Guardians’ Awareness Program এর একটি স্বীকৃতি । স্থানীয় পর্যায়ে সুশীল সমাজ, বিভিন্ন কমিউনিটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর স্বীকৃতির পাশাপাশি এবার বিভাগীয়ভাবে “আইজিপি’স এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ” তাঁর এ ব্যতিক্রমী কাজের স্বীকৃতি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহাম্মদ আল মামুন এর উপস্থাপনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী Students’/Guardians’ Awareness Program সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটা ধারণা তুলে ধরা হলঃ
দেশে নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহ, কিশোর অপরাধসহ নানা সামাজিক সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পত্র-পত্রিকার পাতা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একটা বড় অংশজুড়ে থাকে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনীর গতানুগতিক কাজের বাহিরেও কমিউনিটি পুলিশিং এর ব্যানারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যতিক্রমী পন্থায় কাজ করার চেষ্টা করেছি।
অনেকটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ময়মনসিংহ জেলার ৭০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে অ্যাওয়ারনেস বিল্ডিং প্রোগ্রাম করেছি। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মশালায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ইভটিজিং, মাদক, জঙ্গিবাদ, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, কিশোর অপরাধ, সড়ক দুর্ঘটনা, বিভিন্ন ধরণের প্রতারণাসহ ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণ, করুণ ও লোমহর্ষক চিত্রগুলো তুলে ধরা হয়, প্রতিটি বিষয়ের শেষে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখতে মা-বাবা ও অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়। কর্মশালা শেষে মা-বাবা ও অভিভাবকদের করণীয় সংক্রান্তে ইভটিজিং, মাদক, জঙ্গিবাদসহ সামাজিক ব্যাধি বিরোধী লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করা হয়। এ উদ্যোগের নাম দিয়েছি “Students’/Guardians’ Awareness Program” এবং সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকেও এ নামে একটি পেইজ ও গ্রুপ খুলেছি। ফেজবুক ব্যবহারকারীরা ও সাধারণ জনগণ পুলিশের এ ব্যতিক্রম উদ্যোগকে জনবান্ধব বা জনমুখী বলে মন্তব্য করছেন।
পুলিশের এ ব্যতিক্রমী প্রোগ্রামটি ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মাঝে কেমন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে তার ধারণা দিতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন ফ্রেশ নিউজ এর প্রতিনিধি আবু ইউসুফ আলী মন্ডল তার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলঃ
“শিক্ষাঙ্গনে পাঠ্যসূচীর বাইরের বিষয় নিয়ে ক্লাশ। ক্লাশরুমে সকল শ্রেণী-শাখার শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সমবেত, উপস্থিত আছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকগণ। ক্লাশে ব্লাকবোর্ডের পরিবর্তে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। মজাদার বিষয়বস্তুর উপর ডকুমেন্টারী, ডিসপ্লে। প্রায় ২/৩ ঘন্টাব্যাপী প্রাণবন্ত সেসন। বিশেষ আকর্ষণ এই ক্লাসের শিক্ষক একজন পুলিশ। এটি হচ্ছে এডিশনাল এসপির ক্লাশ। সম্প্রতি ময়মনসিংহ মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে ক্লাশ ফিরতি ফাস্ট ইয়ারের এক ছাত্রী শিক্ষকপুলিশকে বলে, ‘স্যার, আপনি আমার ফ্রেন্ড। ফেসবুক ফেন্ডলিস্টে আপনি আছেন’। শিক্ষাঙ্গনে পুলিশের ক্লাশে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের কথার্বাতা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে “স্টুডেন্টস/গার্ডিয়ানস অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম” ফলপ্রসু আবেদন সৃষ্টি করেছে। তরুণ প্রজন্মের মানস গঠনে যা ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে”।
সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের ধারণাঃ
সামাজিক সমস্যার বিপক্ষে ও সত্য-সুন্দরের পক্ষে সব সময় কাজ করার চেষ্টা করছি, প্রোগ্রাম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটা ধারণা দেয়া হল। “Students’/Guardians’ Awareness Program”টি মূলতঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ‘অ্যাওয়ারনেস বিল্ডিং প্রোগ্রাম’। ২০০৪ সালে পুলিশ একাডেমী, সারদায় বর্তমান ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ(তৎকালীন এআইজি–সিকিউরিটি সেল)জনাব এ কে এম শহিদুল হক বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের “Community Policing: A Concept of Wide Philosophy” সম্পর্কিত ক্লাশে অংশগ্রহণ করে কমিউনিটি পুলিশিং এবং অনুরূপ সচেতনতামূলক কার্যক্রম করতে আমি উদ্বুদ্ধ হই। এ ক্লাশের ধারণা ছিল একটি পাবলিক ওরিয়েন্টেড বা জনমূখী ধারণা। অপরাধ দমনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশি কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ থাকলে অপরাধ দমন সহজ হয়।
মৌলিক প্রশিক্ষণের পর ২০০৫ সালে বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানায় শিক্ষানবিসকালেও আমি এ বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সেখানে একটি কলেজে ও পাঁচটি স্কুলে এ কাজগুলো করেছিলাম। শুরুতে ছাত্র-ছাত্রীরা পুলিশের কথা পছন্দ করতো না। পরে ক্লাশে তাদেরকে যখন ধারণা দেয়া হল, পুলিশি কাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা হল, বুঝানো হল পুলিশও জনবান্ধব কাজ করতে পারে। তখন তারা ক্লাশে মনোযোগ দিল, তাদের অধিকাংশের মাঝেই আন্তরিকতা দেখা গেল। পুলিশ ভীতি, পুলিশ বিদ্বেষী মনোভাব অধিকাংশ মানুষের রয়েছে-পুলিশ এ জনবান্ধব ধারণায় আন্তরিক হলে পুলিশের প্রতি জনগণের নেতিবাচক ধারণাগুলো থাকবে না। পুলিশ এখন ফোর্স বা বাহিনী নয়, পুলিশ এখন একটি সেবামূলক সরকারী সংস্থা। আমরা জনগণকে পুলিশি কাজের অংশীদার করবো, পুলিশ-জনগনের মাঝে দূরত্ব কমে আসবে, সামাজিক অপরাধ কমে আসবে অর্থাৎ এ প্রোগ্রাম হল কমিউনিটি পুলিশিং এর মূলমন্ত্র নিয়ে গঠিত “সুসংগঠিত জনবান্ধব ও জনমুখী পুলিশিং”।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের পুলিশের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশনের সুযোগ কম হয়। ফলে অনেক অপরাধ তথ্যই পুলিশ পায় না। সামাজিক যেসব সমস্যা বা ব্যাধি আছে সেগুলো সম্পর্কে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং সুনাগরিক হিসেবে করনীয় সম্পর্কে আইনের দৃষ্টিতে জনগণকে সচেতন করাই এ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য। পুলিশ যে জনমুখী কাজ করতে পারে, সেই কাজ দ্বারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, সেটা বুঝিয়ে দেয়া এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে পুলিশ সম্পর্কে ভালো ধারণা সৃষ্টি করা সম্ভব এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে।
পুলিশের সামাজিক আন্দোলনঃ ময়মনসিংহ মডেল
বিগত আড়াই বছরে ময়মনসিংহ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ প্রোগ্রামের আওতায় যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হল ইভটিজিং, মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদ, পারিবারিক সহিংসতা, কিশোর অপরাধ, বাল্যবিবাহ, কন্যাশিশুর যত্ন, সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবেশ সচেতনতা, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা হতে সতর্ক ইত্যাদি।
২০১৫ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ জেলায় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে জাগরণমূলক জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। যা ঐ সংকটময় মুহূর্তে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছিল, ফলে ময়মন সিংহ জেলায় বড় ধরণের সন্ত্রাসি-নাশকতামুলক কর্মকাণ্ড ঘটেনি। একটি বিশেষ মহল কর্তৃক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মের বিভিন্ন ভুল দিক ব্যাখ্যা করে বুঝানো, ধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা না দিয়ে ধর্মের নামে জিহাদ করে পরকালে তাদেরকে বেহেশত পাওয়ার প্রলোভন দেখানো, ছোটদের হাতে জিহাদি বই তুলে দেয়া, অবোধ সন্তানদের কুসংস্কারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফেলাসহ নিজেকে কিভাবে শহীদ করে দেবে বা অন্তর্ঘাতী কর্মকাণ্ডে জড়িত করবে, এ ভুল ধারণাগুলো দেয়া হয়। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এ প্রোগ্রাম ফলপ্রসু হয়েছে।
আর একটি দিক হচ্ছে, এ প্রোগ্রামের ৭০% আলোচ্য বিষয় মেয়েদের সমস্যা ও অধিকার নিয়ে। তাই এ প্রোগ্রামে তুলনামূলকভাবে মেয়েরাই বেশি উপকৃত হয়। মেয়েদেরকে সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী করে ডমেস্টিক ভায়োল্যান্স থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
বাল্যবিবাহের বিষয়েও গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। বাল্যবিবাহ ও প্রেমপলায়নের ভয়াবহ দিকগুলো এ কর্মশালায় তুলে ধরা হয় এবং মামলার সূত্রধরে বুঝানো হয় এর ভয়াবহতা কতটা তীব্র হতে পারে। তখন তারা ভাবে, এটা করা যাবে না। তাই মেয়েরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহন করলে তারা বাল্যবিবাহে রাজী হবে না আর অপরিণত অবস্থায় (ক্লাস সেভেন/এইটের) মেয়েরা প্রেমপলায়ন করবেনা। ক্লাশে তাদের কাছ থেকে এসব সামাজিক বিষয়ে শপথ আকারে নিয়ে নেয়া হয় যাতে তারা এগুলো না করে।
যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে অনেক বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা এ সব সামাজিক ব্যাধি থেকে সতর্ক থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
বিগত দুইবছরে ময়মনসিংহে ইভ টিজিং এর বড় কোন ঘটনা ঘটেনি, কমে এসেছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের মাদকাসক্তের হার, কমে এসেছে বাল্যবিবাহ ও অপরিণত ছাত্রীদের প্রেমপলায়নের হার, ছাত্রীদের ফোন পেয়ে বন্ধ করা হয়েছে অনেক বাল্যবিবাহ।
শুধু স্কুল-কলেজ নয় বিভিন্ন অডিয়েন্সে, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে, স্পোর্টস কনটেস্ট, পাবলিক মিটিং, এনজিওর সভা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ পর্বে(নবীন বরণ/বিদায় সমাবেশ), বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে এ প্রোগ্রামের ধারণা নিয়ে কথা বলে ইতোমধ্যে বৃহত্তর জনগনের কাছে জেলাপুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তাই প্রোগ্রামটির কারণে পরিচিতিও বেড়েছে। এজন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথি করার জন্য আয়োজকরা আমন্ত্রণ করে আসছিলেন। স্থানীয় গণমাধ্যম, বিভিন্ন অন লাইন পত্রিকা, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সামাজিক সংগঠন, এনজিও ও ময়মনসিংহবাসী এ জনমুখি উদ্যোগ ও অনবদ্য ভুমিকাকে “পুলিশের সামাজিক আন্দলনঃ ময়মনসিংহ মডেল” বলেও ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে।
ময়মনসিংহের কয়েকটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এ প্রোগ্রামের ধারণা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীতে নাটক মঞ্চায়ন করেছে এবং “Students’/Guardians’ Awareness Program” কে স্বীকৃতিস্বরূপ সংবর্ধনা দিয়েছে। তাছাড়া এ সচেতনতামূলক কর্মশালার সচিত্র কার্যক্রম নিয়ে ফেইসবুকে প্রচার ময়মন সিংহের বাইরেও ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও সচেতন মহলে সাড়া ফেলেছে।
এ সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের প্রত্যাশাঃ
আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত ও এর বড় একটি অংশ শিশু। এ কোমলমতি শিশুকে পেছনে ফেলে উপরে উঠে আসা অসম্ভব, তাই এদের দিকে নজর দিতে হবে। তারা যেন সামাজিক ব্যাধিতে আচ্ছন্ন হয়ে উঠতে না পারে এ জন্যই এ প্রোগ্রাম।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরে অন্তত একবার এ সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের ভুল পথটাকে বুঝতে পারবে, তারা আসল পথে ফিরে আসবে, অভিভাবকরাও দায়িত্বশীল হবেন। কোনো ধরনের কুসংস্কার বা প্রতারণার পথ ছাত্রছাত্রীরা বেছে নেবে না। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ বা ধর্মীয় গোড়ামী থেকে তারা বেরিয়ে আসবে।
এ প্রোগ্রামের একটি বিশেষত্ব হল কোন জটিল তত্ত্ব (Theory)এখানে ব্যবহার করা হয়নি। ঘটে যাওয়া সব ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় ও বর্জনীয় তুলে ধরা হয় তথ্য-চিত্রের মাধ্যমে-যা সকল বয়সের মানুষের বোধগম্য ও সহজবোধ্য, এ অনুষ্ঠানের আয়োজনও ব্যয়বহুল নয়। তাই সামাজিক ব্যাধিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে সবখানে ছড়িয়ে দিতে চাই।
বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেলে পরিনত হয়েছে, কি করতে হবে তা দেখিয়ে দেয়ার মডেলে পরিনত হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মানজনক পুরস্কার অর্জনের পাশাপাশি ১০০জন গ্লোবাল থিঙ্কারের মধ্যে ১৩তম অবস্থান অর্জন করেছেন। তিনি ইভটিজিং, মাদক, জঙ্গিবাদ-চরমপন্থা এর মতো বার্নিং ইস্যুগুলোর বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি ঘোষণা করেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ শুভ উদ্যোগ তথা “জিরো টলারেন্স” নীতিকে সফল করতে এবং ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক ব্যাধি হতে ফিরিয়ে এনে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীল করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক “Students’/Guardians’ Awareness Program” টি খুবই সময়োপযোগী ও ফলপ্রসু (ময়মনসিংহ এ প্রমাণিত) হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মন্তব্যসমূহ