চট্রগ্রাম প্রতিনিধি:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম সেবা সমিতির সদস্য থাকা অবস্থায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টির চাল তুলে আনতেন। সেই চাল বিক্রি করে গরীব ছেলেদের বই-খাতা কেনার পাশাপাশি পরীক্ষার খরচ বহন করতেন। মুষ্টি চাল তুলে গরিব ছেলেদের পড়াশুনা ব্যবস্থা করার যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জন্য উজ্জল দৃষ্টান্ত। কিন্তু বর্তমান ছাত্র রাজনীতিতে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা কয়জনই বা করেছেন ছাত্রলীগে ?
সন্ত্রাস-দুর্বৃত্তায়নে কুলষিত ছাত্র রাজনীতির এই যুগে প্রায় সকলেই যখন টাকা আর ক্ষমতার পেছনে ছুটে চলছেন । পদ-পদবীকে ব্যবহার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার আরো উঁচু সিঁড়ি খোঁজার পথে থাকেন।
সেই স্রোতের বিপরীতে হয়তো হাতেগুণা কয়েকজনকেই পাওয়া যাবে যারা বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে বুকে ধারণ করে সত্যিকার অর্থে ছাত্রলীগের আসল কাজটিই করে যাচ্ছেন অর্থ্যৎ ছাত্রদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন । ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগে সারা দেশে হাতোগুণা সেই কয়েকজনের মধ্যে একজন হলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ।
ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি নগরীর সরকারী মুসলিম হাই স্কুল থেকে ২০০৪ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করার পর হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ওমর গণি এম ই এস কলেজ থেকে সফলতার সাথে ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন । চট্ট্রগামের ছাত্র রাজনীতিতে ইতোমধ্যে যোগ্যতার প্রমান রেখেছেন রনি । সম্প্রতি একটি বিতর্কিত ঘটনায় কারাবরন করার ঘটনার মধ্যদিয়ে শুধু চট্টগ্রাম নয় , দেশে বিদেশে রনির মুক্তির জন্য যে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তা অনুকনীয় হয়ে থাকবে পরবর্তি প্রযন্মের জন্য ।
২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবার পর থেকে নুরুল আজিম রনি তাঁর দায়িত্ব ঠিকই পালন করে যাচ্ছেন। একের পর এক শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আপোষহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করেই ছাড়ছেন তিনি।
দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল নগরীর কাজেম আলী স্কুলে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ আন্দোলন রাজনীতির নানা হিসাবের ফাঁদে পড়ে সফল না হলেও কিন্তু স্রোতের বাইরে চলা ছাত্ররাজনীতি নতুন করে পথ দেখেছে রনির হাত ধরেই। এরপর একে একে লালদীঘির খেলার মাঠ দখলের প্রতিবাদ, গণ পরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া করার দাবি (২ সেপ্টেম্বর ২০১৫), সড়ক দুর্ঘটনা রুখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটওভার ব্রিজ ও ট্রাফিক পুলিশ রাখাসহ (১৪ জুন ২০১৫) অতিরিক্ত ফি বিরোধী আন্দোলন ( ১৪ই নভেম্বর ২০১৫) ও তিন দশক পর চট্টগ্রাম ও মহসিন কলেজে প্রগতিশীল সংগঠন "বাংলাদেশ ছাত্রলীগের" পতাকা উড়ানো থেকে শুরু করে, কি করেননি নুরুল আজিম রনি। একজন ছাত্রনেতা হিসেবে শিক্ষার্থীরাতো এমন একজন নেতা কেই চান। যেমনটি করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যেমন তিনি বিভিন্ন বাধা পার করেছেন, সব ভাল কাজ করার পরও যেমন স্বাধীনতা বিরোধীরা সমালোচনায় করেছেন ঠিক তেমনি রনির এসব কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করতে একটি মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মনিষীর ওই বাক্যটির মত, 'তোমার লক্ষ্য নিয়ে যদি কেউ টিটকারী না করে তাহলে মনে করতে হবে লক্ষ্যটা খুবই ছোটো।' তাইতো অনেকেই বলছেন, রনি'র লক্ষ্যটা বড় হওয়াই নানা সমালোচনায় তাকে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু সব বাধার পরও এগিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করে ছেড়েছেন তিনি। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামাত-শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম ও মহসিন কলেজে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকা উড়িয়ে তিনি যেটি প্রমাণ করেছেন।
ছাত্রলীগের ইতিহাসে অনেক প্রাপ্তির মধ্যে এটিও একটি বড় পাওয়া হিসেবে লেখা থাকবে। রনিসহ অনেকে এমনটাই মনে করছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামে শিক্ষা-সংস্কৃতি, সরকারী স্কুল-কলেজ নির্মাণের দাবি, বিভিন্ন স্কুলে তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বেসরকারী স্কুলে অভিন্ন ভর্তি ও কোর্স ফি নির্ধারণের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে অধিকার আদায় করে নিয়েছেন নিজের নেতৃত্ব গুণের কারণে। এছাড়াও বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য রুখা এবং যুদ্ধপরাধীর নাম ফলক মুছে দেয়া (১৬ই মে ২০১৫) ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটুক্তির প্রতিবাদ করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাসহ (১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪) বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশব্যাপী ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন চট্টগ্রামের তরুণ এই ছাত্রনেতা।
যার ফলশ্রতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ঠিক তেমনি সাবেক নগর পিতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছেও ভাল কাজ ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য একান্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠছেন।
ছাত্র নেতা রনির প্রসঙ্গে বীর চট্টলার বীর নেতা স্বয়ং মহিউদ্দিন চৌধুরীই বলেছেন, 'এখন আমার শরীরে আর জোর নেই। এখন রনি'ই আমার নেতা।' চট্ট্রগামে শিবিরের আস্তানা বলে পরিচিত চট্টগ্রাম কলেজ শিবির মুক্ত হয়েছে এই রনির হাতেই ।
চট্ট্রগামের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত অনেকেই নগর ছাত্রলীগ নেতা রনি'র অর্জন কে সামনে রেখে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম বলেন, 'মাস কয়েক আগেও এ ক্যাম্পাস মনে হয়েছিল জেলখানা। তিনজন বসে কথা বলতে পারতাম না। বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করা দূরে থাক নিয়মিত দিতে হতো মাসিক বায়তুলমাল নামে চাঁদাও। কিন্তু শিবির মুক্ত করার পর থেকে এখন মুক্ত, স্বাধীন। বায়তুলমাল নামে কোনো চাঁদাও দিতে হয় না।' সব কিছুর পেছনে নগর ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির অবদান বলে মনে করেন তিনি।
পাশেই সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মামুন মুহসিন বলেন, 'এতোদিন এ কলেজে পড়তাম এবং স্বপ্ন দেখতাম কখন শিবির মুক্ত হবে। কেননা শিবিরের কথা না শুনলে নানা ধরনের নির্যাতন করত। এছাড়াও বিশেষ ফি নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। এমনকি তাদের ভয়ে শিক্ষকরাও চুপ থাকত। কিন্তু এখন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক ভাল আছি। এ জন্য অবশ্যই রনি ভাইয়ের অবদানতো আছেই।'
এতো সব অবদানেও নগর ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি সন্তুষ্ট নন। অথচ তার উপর যেখানে সবাই খুশি কিন্তু তারপরও তিনি আক্ষেপের জায়গা রেখে দিয়েছেন। তাঁর সাথে কথা বলে এমনই আভাস পাওয়া গেল। রনির ভাষায় " ছাত্রলীগকে যদি ছাত্রলীগের মত তার কাজ করার স্বাধীনতা দেয়া হয় তাহলে এ ছাত্রলীগ সেই 'বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন', 'ঊনসত্তরের গণ অভুউত্থান' ও 'একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের' মত সেই স্বর্ণালী যুগে ফিরে যেত। তখন ছাত্রলীগে কোনো গ্রুপিং থাকত না। মারামারি হতো না, তখন সবাই এ ছাত্রলীগকে আদর্শ মনে করে বুকে লালন করত বলে মনে করেন তিনি।
ছাত্র নেতা রনি আক্ষেপে করে বলেন, 'নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আজও আওয়ামী লীগের নেতাদের কথা মানতে হয়। যেটা ছাত্রলীগের জন্য সুখকর নয়। ছাত্রলীগকে যদি ছাত্রলীগের মত বাঁচতে দেয়া হয় তাহলে এ সংগঠন অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সবাই তখন মনে প্রাণে ছাত্রলীগের আদর্শকে লালন করবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম কলেজে প্রায় সময় আমাদের ছাত্রদের মারা হত। অনেক সহ্য করেছি তারপরও যখন নির্যাতন চলছিলো তখন থেকে আমার মধ্যে জেদ চলে আসে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে কাজ শুরু করে কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে আজ ওইখানে প্রগতির পতাকা উড়ছে। যেটা তিনদশক ধরে কেউ পারেনি।'
ছাত্র রাজনীতিতে ইতিবাচক ভুমিকায় বীর চট্টলায় এখন অনেকের কাছেই নুরুল আজিম রনি " বীর চট্ট্রলার বীর" বলে খ্যাত হয়েছেন । এ প্রসঙ্গে রনি বলেন রাজনীতিতে জনগনের ভালোবাসা পাওয়া সবচেয়ে বড় বিষয় । " কিছু পাওয়ার আশায় নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের রাজনীতি করি " । 'যতদিন বেঁচে থাকব আজীবন এ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করার চেষ্টা করব। তাদের নিয়েই থাকব। রাজনীতি করে এমপি হব, মন্ত্রী হব, টাকা কামাব এই ধরণের চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি, ভবিষ্যতেও আসবেনা।'
মন্তব্যসমূহ