ঘুরে এলাম পাহাড়ি কন্যা দার্জিলিং খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বান্দরবান ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া: বান্দরবান ঘুরে এলাম কি যে এক শিহরন জাগানো ভ্রমণ ছিল ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।পাহাড়ি কন্যা দার্জিলিং খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বান্দরবান।  একসময় মানুষ তিন/চার বছরেও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করত কি না, সন্দেহ আছে! আর এখন মানুষ একটু সময় পাইলেই কম সময়ে কত জায়গা ঘুরতে পারবে সেই হিসাব করে। দিন বদলাইছে। একটু 'রিলাক্স' না করতে পারলে মানুষের মন এখন বেশি আনচান করে। আমি মানুষ। তাই সূত্রানুসারে যান্ত্রিক নগরী থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম 'বান্দরবান। মেঘ বৃষ্টি একটি দিন। ভোর বেলা হাটছিলাম রাস্তা দিয়ে। হঠা্ৎ করে এক ঝটকা বৃষ্টি আর বাতাসে গায়ের উপর ঝরে পড়লো । পথে পথে কিছু বর্ষার ফুল। রাস্তার পাশের হঠাৎ করে মনে হল, আমি তো নগর জীবনের ব্যস্ততায় আটকে ছিলাম । কোথাও পালিয়ে চলে যাই।

সুযোগও আসলো! ঈদের পরের দিন ছুটে চললাম স্বামী আর পুত্র সহ বান্দরবান ।শহরটা একটু ঘুরে দেখলাম। ছোট হলেও বেশ ভাল লাগলো। একটা প্রধান রাস্তাকে রেখে তার দুপাশে গড়ে ওঠা বাজার, বাড়ি, অফিস। দুপুরের দিকেই বেড়িয়ে পড়লাম বৌদ্ধ স্বর্ণমন্দির দেখতে।! স্বর্ণমন্দির দেখতে সুন্দর, পাহাড়ের ওপরে হওয়ার তার সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে আরো অনেক। তার ওপর রেলিং এর বাইরে এমনি এমনি বেড়ে ওঠা কুরচি ফুল আর ঝুমকোলতার গাছ চোখে পড়ার মত। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে। দূরে পাহাড়ের আহ্বান। সব মিলে এক অন্যরকম পরিবেশ। স্বর্ণমন্দির থেকে গেলাম নীলাচল। গাড়িতে পাহাড় বেয়ে ওঠার মজাই আলাদা। কিন্তু বান্দরবানের এ পাহাড়ে চড়া অন্যরকম। নীলাচলে পৌছলাম । পাহাড়ের ওপর থেকে দেখতে পেলাম অদূরেরই বান্দরবান শহর। অন্যান্যদিকে পাহাড়, কিন্তু সেগুলো দেখতে হয় নিচের দিকে তাকিয়ে। এখানেও দেখলাম কুরচি ফুল, মুচকুন্দের গাছ, মুচকুন্দের কাচা ও পাকা ফল যা এই প্রথম দেখলাম। রাস্তা থেকে দূরে, পাহাড়ের ঢালে। দূরবীন দিয়ে যে দিকেই তাকাই পাহাড় আর পাহাড় , ঈদের পড়ে দিন বলে দলে দলে মানুষ আসছে । এর মধ্যে শুরু বৃষ্টি । কিছু সময় পড়ে বৃষ্টি থেমে গেল । আমি নীলাচলের ঠিক শেষ পাহারের উপড়ে । নিজের চোখে না দেখলে বুঝনো যাবে না সৃষ্টি যে কত সুন্দর । তারপর গেলাম মেঘলা। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা আর মাঝখানে গভীর লেক। লেকের উপর দিয়ে এপার থেকে ওপারের প‍াহাড়ে যাওয়ার জন্য দুটো ঝুলন্ত ব্রিজ আছে। বেশ রোমাঞ্চকর সে পথ পার হওয়া। কাঠের পাটাতন। ও পাড়ের পাহাড়গুলো যেন আরো উঁচুতে। সন্ধায় ঘুরে দেখলাম শহরটা। এ বছরের প্রথম এত বড় পাকা কাঠাল দেখলাম এখানেই। দেখলাম প্রচুর কলা, এমনকি তরমুজও পেয়ারা পাহাড়ি আম । বান্দর বানে শহরে আছে বার্মিজ বাজার । পাহাড়ি মেয়েরা তামাক খাচ্ছে । বাঁশের কচি মুল বিক্রি করছে । শামুক কাঁকরা । পাহাড়ি লতাপাতা ছোট ছোট পান কাঁচামরিচ পাকা পেপে । আমি যদিও পাহাড়ি আদিবাসিদের ভাষা বুঝি না। তবে তারা মনে হয় কম কথা বলে । এক দামে বিক্রি করে সব জিনিস । আদিবাসিদের একটা প্রিয় খাবার নাপ্পি দেখলাম । বামিজ মেয়ে বেশ ব্যবসায়ী । হাসি মুখে সুন্দর করে কথা বলে । সকালেই ঘুরে এলাম স্টেডিয়াম, ডিসি অফিসের সামনে দিয়ে রাস্তা ধরে অনেক দূর। সকালের নাস্তা করে রওনা হলাম নীলগিরির উদ্দেশ্যে। চিম্বুকের পাশ দিয়ে উচু পাহাড়ের উপর দিয়ে দীর্ঘ একটা রাস্তা। রোদের তীব্রতা বাড়েলে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে সব ভুলে গেলাম। যখন পৌছলাম আকাশে তেমন মেঘ নেই। হেলিপ্যাডে দাড়িয়ে দূরের আকাশ দেখছিলাম। হঠাৎ চোখে পরলো নিচে পাহাড়ের উপরে মেঘের ছায়া। অন্যরকম এক অনুভূতি। এখানে পাহাড়ের উপর পেলাম কুরচিসহ আরো বেশ কিছু অপরিচিত ফুল। মনে হল রাতের আকাশে মেঘ আর তারার লুকোচুরি এখান থেকে দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। ঠিক তেমনি সূর্যদয়।

মন্তব্যসমূহ