ফালুর পদত্যাগের দুই কারণ

বিএনপির খুব বড় কোনো নেতা না হয়েও অনেক ‘বড়’ কেউ ছিলেন তিনি। জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে একেবারে জিরো থেকে হিরো হয়ে যান তিনি। 
 
তিনি আর কেউ নন, মোসাদ্দেক আলী ফালু। একসময় ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। তারপর এক উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে হন সংসদ সদস্য। তারপর ঘটনার ধারাবাহিকতায় হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। ফাঁকে প্রতিষ্ঠা করেন শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেল এনটিভি ও আরটিভি এবং বাংলা দৈনিক আমার দেশ। শেষের দুটি এখন আর তার হাতে না থাকলেও আছে এনটিভি। মোটের ওপর ফালুর যা কিছু অর্জন সবকিছু বিএনপি তথা জিয়া পরিবারের সুবাদে।
 
সেই ফালু গত শনিবার এ কী করলেন – এ নিয়ে সারাদেশে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। সেদিন তিনি বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান পদপ্রাপ্তির মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টার মাথায় পদত্যাগ করে যেন বোমা ফাটালেন। 
 
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর লেখা এ পদত্যাগপত্রটি শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এনটিভির এক কর্মকর্তার মাধ্যমে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। পদত্যাগপত্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু লেখেন, ‘ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
 
মোসাদ্দেক আলী ফালুর এ সিদ্ধান্তের কারণ জানতে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায় বিবার্তা।অনুসন্ধানে বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, যে দুটি কারণে ফালু পদত্যাগ করেছেন তার একটি হলো অভিমান। ফালুর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত নবগঠিত কমিটির চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবার্তাকে বলেন, মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য তার ভাই, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুউদ্দিন আহমেদ নুরুসহ ১০জনের একটি তালিকা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে দেন। কিন্তু কমিটিতে তার একজনকেও রাখা হয়নি। বরং চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস এবং রিজভী যে কয়েকটা নাম দিয়েছেন তারা সকলেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
 
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে জানা গেছে, ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই ফালু বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এ  বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের এমন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হননি। অথচ যে ব্যক্তিটি ক্ষমতাসীন বিএনপির অনেক ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হলো না। বরং সে  সরকারের সাথে সখ্য বজায় রেখে নিজের আখের গোছাচ্ছেন। 
 
ওই নেতা আরো বলেন, শেয়ার কেলেংকারিতে যে চার ব্যক্তি জড়িত ছিল তার মধ্যে ফালু একজন। তারপরও এ সরকারের আমলে তার বিচার হল না। 
 
নেতাকর্মীদের অভিযোগ,  বিএনপির রাজনীতিতে যার বিন্দুমাত্র ভুমিকা নেই অথচ শুধু জিয়া পরিবারকে ব্যবহার করে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।  রহস্যজনকভাবে বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আজ শুধু নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্যই বিএনপিকে বোঝা মনে করছেন তিনি।
 
মোসাদ্দেক আলী ফালুর অভিমানের বিষয়ে অস্বীকার করে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, মামলার কারণে  রুহুল কবির রিজভী গত কয়েকদিন ধরে ফেরারী। তাছাড়া রিজভীর সুপারিশকৃত অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাননি।
 
বিএনপির নবগঠিত জাতীয় কমিটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক এ ব্যাপারে বিবার্তাকে বলেন, ফালু সাহেব পদত্যাগ করলেও তার পদত্যাগপত্র হিমাঘরেই থেকে যাবে। গৃহীত হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।
 
মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

মন্তব্যসমূহ