শরীয়তপুরের ৪টি উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। নিজ উদ্যোগে নদী ভাঙন এলাকা ছেড়ে নিরাপদে চলে যাচ্ছে ভাঙন কবলিত মানুষ। এরই মধ্যে ৯০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ই বেশী। অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা প্রদান করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ রোববার সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভা ডেকে নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া, সুচিকিৎসা প্রদান ও ত্রাণের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান, সিভিল সার্জন ডা. মসিউর রহমান, স্থানীয় সরকার শাখা উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাদেরসহ বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিত নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিনিধি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাবৃন্দ। শরীয়তপুরের বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ১ মাস ধরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে এলাকায়। প্রায় ১০ দিন ধরে বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বর্তমানে কিছু এলাকায় বন্যার পানি বসত বাড়িতে প্রবেশ করেছে। এতে গৃহপালিত পশু, শিশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। নদী ভাঙন এলাকার মানুষ সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা আলম খার কান্দির জলিল খাঁ, খলিল খাঁ জানায়, বন্যার পানি বসত ঘরে প্রবেশ করেছে। এখন তারা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি বা বেসরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি তারা। একই এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার অনিল খাঁ জানান, নদী ভাঙনে তার বাড়িসহ আরও কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে। ফসলি জমিও পানির নিচে তাই প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে বসত শুরু করেছে। নদীর পাড় প্লাবিত হওয়ায় নদী ভাঙন কমেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে নদী ভাঙন আবার শুরু হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর এলাকার মর্জিনা বেগম, কোহিনুর আক্তার জানায়, নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রতি বছর নদী ভাঙনে কবলিত হই। এখন খাবার নাই, থাকার জায়গা নাই। সন্তানদের নিয়ে জমি ভাড়া করে থাকি। বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনির হোসেন জানায়, প্রথমে স্কুলের মাঠে পানি ছিল তখনও স্কুলে গিয়েছি। এখন স্কুলের ভিতরে পানি ঢুকছে তাই ক্লাস করা যায় না। ম্যাডাম বলেছে পানি কমলে আবার স্কুল চলবে। কতদিন ছুটি তা বলতে পারি না। নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিনিধি বলেন, জোয়ারের সময় সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাটার সময় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানি নেমে আসে। দু'দিন ধরে পানি তেমন বাড়ছে না। বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিতদের চিহ্নিত করে তালিকা করা হচ্ছে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, জাজিরা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব নাওডোবা, বড়কান্দি ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নে নদী ভাঙনের কারনেই ক্ষতি বেশি হয়েছে। প্রায় ৩৫টি বিদ্যালয়ের ভিতরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙন এলাকায় অতিরিক্ত চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নগদ ৪ লক্ষ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন জিআর ত্রাণ পৌঁছেছে।
মন্তব্যসমূহ