প্রধানমন্ত্রী পদ্মায় নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেছেন


 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরের জাজিরায় আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেছেন। পরে তিনি মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ৭ নম্বর পিলারের কাছে মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে সেতুর দুই প্রান্ত মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সকাল নয়টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে শরীয়তপুরের জাজিরার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সূত্রে জানা গেছে, কুয়াশার কারণে তাঁর রওনা হতে কিছুটা দেরি হয়।
২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। নিজস্ব অর্থায়নে এটি এ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এই সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চল। এই সেতুতে ট্রেনও চলবে। এশিয়ান হাইওয়ের পথ হিসেবেও সেতুটি ব্যবহৃত হবে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।
পদ্মা সেতু ঘিরে হংকংয়ের আদলে নগর গড়ার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মাওয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হবে। রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে হবে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক।
সরেজমিনে গত কয়েক দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। সেখানে দেশি-বিদেশি হাজারো শ্রমিক ও প্রকৌশলী সেতু গড়ার কাজে ব্যস্ত। প্রকৌশলীরা জানান, এত দিন পরীক্ষামূলক পাইলিং হলেও এবার শুরু হবে মূল পাইলিং।
পদ্মা সেতুর মূল কাজের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ২৭ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মধ্যে সেতুর কাজের ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, নদীশাসন কাজের ১৩ শতাংশ এবং উভয় প্রান্তে সংযোগ সড়কের প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুতে মোট পিলার থাকবে ৪২টি। এর মধ্যে ৪০টি পিলার থাকবে নদীর ভেতরের অংশে। দুটি থাকবে দুই প্রান্তে সংযোগ সেতুতে। নদীর ভেতরের ৪০টি পিলারের প্রতিটিতে ছয়টি করে পাইল করা হবে। এ জন্য মোট ২৪০টি পাইল করতে হবে। সংযোগ সেতুর দুটি পাইলে ১২টি করে ২৪টি পাইল করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী দুপুরে শ্রীনগরের দোগাছিতে পদ্মা সেতু এলাকায় তাঁর জন্য নির্মিত পদ্মা-১০ কটেজে অবস্থান করবেন। কটেজের তিনটি কক্ষে অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে। ভেতরে থাকা একটি বিশাল স্ক্রিনে দেখা যাবে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ তথ্য, সেতু এলাকার কোন প্রকল্পের কাজ কতটুকু এগোচ্ছে। এই কক্ষে বসে তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখবেন।
মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে লৌহজংয়ে মাওয়াঘাট-সংলগ্ন খানবাড়ি ও উত্তর মেদিনীমণ্ডলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। জনসভা শেষে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরবেন।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পদ্মা সেতু। ১৯৯৮-৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর নকশার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। তবে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গেলে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের সঙ্গে এই সেতু নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ২৬ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কর্তৃপক্ষ এ বছরের মার্চে চীনের প্রথামতো মাওয়ায় পদ্মার পাড়ে দুটি গরু, দুটি ছাগল ও দুটি মোরগ জবাই করে সেগুলোর রক্ত নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করে। আট মাস পর আজ সেতুর মূল পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন হচ্ছে।
আরও  পড়ুন..
পদ্মার দুই তীরের মানুষের স্বপ্ন মিলবে এক বিন্দুতে

মন্তব্যসমূহ