একই দিনে দুই বোনকেই একসঙ্গে বিয়ে করে সবাইকে চমকেই দেন পাকিস্তানের মুলতানের এক ‘ভাগ্যবান’ (অনেকের মতে ভাগ্যবানই ) তরুণ আজহার হায়দারি। দুই বউয়ের একজন তাঁর আপন চাচাতো বোন, অন্যজন আপন খালাতো বোন। কি ছিলো এই বিরল ঘটনার নেপথ্যে আর বর্তমানে কেমন আছেন এই ‘ত্রিমাত্রিক দম্পত্তি’ তা নিয়েই ‘আমাদের টাঙ্গাইল’ পাঠকদের জন্য আজ থাকছে ভিন্নধর্মী এক ফিচার । চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক,
কি ছিলো বিরল এই ঘটনার নেপথ্যে
পাকিস্তানের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের পছন্দে বিয়ে করাটাই মুল রীতি। কিন্তু ঘটনার নায়ক আজহারের একদিকে ছিলো পরিবারের সম্মান রাখার দাঁয় অন্যদিকে ছিলো প্রেমিকার সাথে দীর্ঘ সম্পর্কের দায়বোধ । আর এই দোদুল্যমান পরিস্থিতি থেকেই নাকি যত বিপত্তির শুরু। ‘কুল রাখি না শ্যাম’ এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতেই অবশেষে সবাইকে এমনকি দুই পাত্রিকে পর্যন্ত ম্যানেজ করেই শেষ অবধি দুই কনের গলায় একই দিনে ঘটনার নায়ক আজহার পড়ালো বিয়ের মালা !
দেশটির জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম পারহলো ডটকমে প্রকাশিত এক ভিডিও ও খবর সুত্রে প্রকাশ , ২৩ বছর বয়সী আজহার নামের ঐ যুবকের সাথে তার পরিবার বিয়ের জন্য পাত্রী ঠিক করে রেখেছিল ২৮ বছর বয়সী পাত্রী হুমায়রা কাসিমের সাথে। কিন্তু আজহারের সাথে তাঁর ২১ বছর বয়সী খালাতো বোন রুমানা আসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আগে থেকেই ।
এই অবস্থায় আজহার প্রথমে হুমায়রাকে বিয়ে করতে রাজি হননি। কিন্তু তাঁর বাবা এরই মধ্যে কথা দিয়ে ফেলেছেন হুমায়রার বাবাকে। এ অবস্থায় পারিবারিক সম্মানের কথা মাথায় রেখে বিয়েতে রাজি হতে হয় তাঁকে। কিন্তু ওই বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ান প্রেমিকা রুমানা।
২০১০ সালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা- প্রভাবশালী গনমাধ্যম এপি, টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল ও বিবিসিতে পর্যন্ত গড়ায় । সেই বছর ১৯ অক্টোবর বিয়ের আগে ডেইলি মেইলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজহার জানান, রুমানা প্রথমে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁর (আজহারের) পরিবারের কাছে। পরিবার এতে রাজি না হওয়ায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। হাসপাতালে রুমানাকে দেখতে গিয়ে আজহার সিদ্ধান্ত নেন, কিছুতেই রুমানার সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। এ কথা আবার নিজের পরিবারকে জানাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন আজহারের বাবা শামসুল হায়দরি। আজহার তখন উভয় সংকটে।
এমন সংকট কাটাতে আজহার পরিবারকে জানান, তাঁদের পছন্দের পাত্রী এবং নিজের পছন্দের প্রেমিকা দুজনকেই বিয়ে করবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী ও মসজিদের ইমামের সঙ্গেও সেসময় কথা বলেন তিনি।
আজহার জানান, ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী এবং পাকিস্তানের আইনেও বহুবিয়ে বৈধ। ফলে আইনগত দিক থেকেও এমন বিয়েতে কোনো বাধা নেই। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর গত নভেম্বরের শেষদিকের এক বিকেলে হুমায়রা ও রুমানা দুজনকেই আলাদাভাবে একই স্থানে ডেকে পাঠান আজহার।
বার্তা সংস্থা টেলিগ্রাফকে আজহার সেসময় জানান, তাঁরা (হুমায়রা ও রুমানা) কেউই জানতেন না, অপরজনও আসছেন। রেস্তোরাঁয় একজন আরেকজনকে দেখে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ তাঁরা ততদিনে একে অপরের সম্পর্কে খুব ভালো করে জানতেন। আজহার বলেন, ‘দেখা হওয়ার পর আমি দুজনকেই বিয়ের প্রস্তাব দিই এবং আমার সমস্যার কথা খুলে বলি। এরপর আমার প্রস্তাবে রাজি হয় দুজনই।’
প্রকাশিত সংবাদে পারহলো ডটকম জানায় ,আজহারের সঙ্গে রুমানা ও হুমায়রা দুজনেরই বিয়ে পর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই আছেন এই ‘ত্রিমাত্রিক দম্পত্তি’ ।
পাকিস্তানের এই ব্যতিক্রমী বিয়ে বিষয়ে একটি ভিডিও খবর প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যম পারহলো ডটকম । তাদের মতে, আজহার হায়দরি এখন ‘হিরো নাম্বার ওয়ান’। সেসময় এই ভিডিও এবং ঘটনা ‘ভাইরাল’ হয়ে পড়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও। অনেক যুবক নাকি অস্ফুস্টে বলেছেনও‘ আহা কি ভাগ্য ব্যাটার ‘ !
গত পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর এখন কেমন আছেন ঐ ‘ত্রি-দম্পত্তি’ তা নিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের জনপ্রিয় গনমাধ্যম পারহলো ডটকম একটি ফিচার প্রকাশ করে। প্রকাশিত ফিচার থেকে জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছরেও দারুণ ভালো আছেন এই ব্যাতিক্রম ‘ত্রিমাত্রিক দম্পত্তি’ । আজহারের দুই স্ত্রীই অকপটে স্বীকার করেছেন, সবদিক থেকে আজহারের সিদ্ধান্তটিই ছিল সবচেয়ে ভালো সমাধান। কারণ পরিবারকে সন্তুষ্ট রাখতে এটি ছাড়া তখন আর করার কিছুই ছিল না তাঁর। সংবাদমাধ্যমের কাছে রুমানা ও হুমায়রা দুজনেই জানিয়েছেন, তাঁরা দুই বোন ও বন্ধুর মতো বাকি জীবনটা একসঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা নিয়েই সংসার শুরু করেছেন, এমনকি তার বাস্তবেও রুপ দিতে পারছেন । সবার কাছে আগামীর দিনগুলোর জন্যও দোয়া চান তারা ।
মন্তব্যসমূহ