নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, ২০০৭ সালে সারা দেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের কর মওকুফ করে একটি সনদ দেয়া হলেও তা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়। অনেকে আমাকে বলেছেন আপনি আইন না মেনে এই কাজ করলে আপনাকে জেলে যেতে হবে। আমি তখন বলেছিলাম, জেলে যেতে আমি রাজি আছি তবুও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়ে যাবো। মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কখনো পরিশোধ করা যাবে না বলেই সিটি কর্পোরশনের আওতাধীন বসবাসরত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কর মওকুফ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে সিটি কর্পোরশনের সামনে বিবি রোডে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরশনের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের কর মওকুফ, সনদপত্র ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আট মিনিটের বক্তব্যের এক পর্যায়ে কান্নায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মেয়র আইভী। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারাও মেয়রের চোখে পানি দেখে আর নিজেদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। কাঁদলেন মেয়র, অশ্রু ঝড়লো মুক্তিযোদ্ধাদের। তখন আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় অনুষ্ঠানস্থল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, নিারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার, সচিব মাহমুদুর রহমান হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ডেপুটি কমান্ডার এড. নুরুল হুদা, সদর উপজেলা কমান্ডার শাহজাহান ভূইয়া জুলহাস, বন্দর উপজেলা কমান্ডার আব্দুল লতিফ, , জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, প্যানেল মেয়র-১ হাজী ওবায়েদ উল্লাহ, প্যাণেল মেয়র-২ মনিরুজ্জামান মনির, প্যাণেল মেয়র-৩ শারমিন হাবিব বিন্নি, কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, কামরুল হাসান মুন্না, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, সুলতান আহম্মেদ, খোদেজা খানম নাসরীন প্রমুখ।
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে আইভী আরো বলেন, আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার কাছ থেকে শিখেছি সত্য কথা বলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা, ন্যায়ের পক্ষে থাকা, সাধারণ মানুষের সেবা করতে। তাই আমি চেষ্টা করেছি ন্যায়ের পক্ষে থেকে আপনাদের সেবা করার। আমি জানিনা আপনাদের কতটুকু সেবা করতে পেরেছি। না পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আইভী বলেন, ২০১১ সালে আপনারা আমার পাশে থেকে যে সাহায্য করেছেন সেই ঋণ আমি জীবন দিয়েও পরিশোধ করতে পারবো না। তখন সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা, বন্দরের মুক্তিযোদ্ধারা, সদরের মুক্তিযোদ্ধারা আমার পাশে এসে দাঁড়ানোয় নারায়ণগঞ্জের গনতন্ত্রের বিজয় হয়েছিল। সেদিন আমার পাশে থাকা আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আমি আশা করি আগামীতেও আপনারা আমার পাশে থাকবেন। আমি সব সময় জনগনের সেবা করতে চাই, ন্যায়ের পক্ষে থাকতে চাই, সেখানে আমি একা হলেও কোন সমস্যা নেই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আলী আহাম্মদ চুনকা সাহেবের মত সাধারণ মানুষের সেবা করে যাবো।
মন্তব্যসমূহ