যশোর শহরের পতিতা পল্লী ও আবাসিক হোটেলগুলি ঘুরে জানা যায়, পতিতাপল্লীর যৌন কর্মীদের পুরুষ খরিদ্দার একেবারে কম। দুই একটি খরিদ্দার হলে তাতে যা উপার্জন হচ্ছে তাতে তাদের খোরাকি, ঘরভাড়া, পোষাক ও কসমেটিক কেনা হচ্ছেনা। অনেক ঘরওয়ালী ঘর ভাড়া দিতে না পেরে ঘর মালিকদের বেশি কথা শুনছে। বয়স্ক পতিতারা অনেক সময় অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাবু বাজার পতিতা পল্লীর সর্দারনী রেশমার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শহরের বিভিন্ন আবাসিকে অসামাজিক কাজ চলছে বলে তাদের খরিদ্দার কম। ২নং গলির সর্দারনী শুটকি ও পান্না একই কথা জানান। ১নং গলির শাবানা, আইভি ও সখিনার কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, খরিদ্দার একেবারে কম। আমরা খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। তবে আগে যেমন বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতে হতো এখন সেগুলো থেকে রক্ষা পেয়েছি। মাড়োয়ারি মন্দির ২নং গলির পারুল ও ছালেহার কাছে খরিদ্দার সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, প্রতিদিন একটা কি দুইটি খরিদ্দার হয়, আমরা ধারদেনা করে চলছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে দু’ডজনেরও বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এরমধ্যে হাতেগোনা দু’পাঁচটি ছাড়া বাকিগুলোতে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। এসব হোটেলে রয়েছে চৌকস কর্মচারী। এরাই মূলত এই কারবারে জড়িত। এরা মালিকের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই যৌন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হোটেলে কাদের বিচরণ? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। জানা গেল, এই হোটেলগুলোতে শুধু পতিতাদের যাতায়াত নয়, স্কুল-কলেজের ছাত্রী এমনকি গৃহবধূদেরও বিচরণ রয়েছে। তাদের সাথে ওই হোটেল কর্মচারীদের রয়েছে সম্পর্ক। এদের মধ্যে যোগাযোগ হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। মোবাইলে ডাক পড়লেই যৌনকর্মীরা ছুটে যায় হোটেলগুলোতে। আবার কেউ কেউ সাত সকাল থেকেই অবস্থান করে হোটেলে। স্কুল-কলেজের বিপথগামী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তেমন একটা ছায়া মাড়ায় না। পরিবারও মাথা ঘামায় না তাদের নিয়ে। এরা যৌন ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা পেতে অবৈধ কারবারে মেতে উঠেছে। অন্যদিকে দুশ্চরিত্রের গৃহবধূদেরও পদচারণা রয়েছে হোটেলগুলোতে। এরা স্বামী-সংসার ফাঁকি দিয়ে মার্কেটিংয়ের নামে অথবা নানা অজুহাতে শহরে আসে এবং হোটেলে এসে দেহ বিকায়। এদের পাল্লায় পড়ে সহজ-সরল মেয়েরাও আজ বিপথগামী। একাধিক সূত্র মতে, স্কুল-কলেজের মেয়ে ও গৃহবধূরা সকাল থেকে বিকেল বা সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়ে থাকে।
তবে ডাক পড়লে পতিতারাও এসময়ের মধ্যে হোটেলে এসে খরিদ্দারদের সাথে সঙ্গ দেয়। সূত্রটি জানায়, মূলত রাতের বেলা হোটেলগুলোতে পতিতারাই অবস্থান নিয়ে থাকে। এরা সারারাত দেহ বিকিয়ে ভোর বেলা ফিরে যায় নিজ নিজ ঠিকানায়। এসব হোটেলের খরিদ্দার কিশোর থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী পুরুষরা। তবে কিশোর ও যুবকদের এখানে দিনের বেলা পদচারণা থাকলেও রাতের বেলা অবস্থান করে মধ্যবয়সীরা। হোটেলের খাতায় এদেরকে যৌনকর্মীদের স্বামী হিসেবে দেখানো হয়। যে কারণে এরা খুব একটা ধরা খায় না। সূত্র মতে, এসব হোটেলে প্রেমিক-প্রেমিকাদেরও (বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী) অবস্থানের সুযোগ করে দেয় সংশ্লিষ্ট হোটেলের কর্মচারীরা। তবে এ ক্ষেত্রে ভিজিটটা একটু বেশি। হোটেলের গোপন কোন কক্ষ ২/৩ ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়ে এরা যৌন ুধা মেটায়। পুলিশি ঝামেলা সামলায় হোটেলের লোকজন। এদিকে আবাসিক হোটেলগুলোতে অবাধে দেহ ব্যবসা চলার ফলে বিপথগামী হচ্ছে দেশের চালিকাশক্তি যুবসমাজ। তারা এসব হোটেলে এসে নেশার পাশাপাশি মিলিত হচ্ছে যৌনকর্মীদের সাথে। আর এর পেছনে টাকা যোগাতে গিয়ে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে।
উল্লেখ্য, একসময় যশোর শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে দেহ ব্যবসা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। যদিও তৎকালীন সহকারি পুলিশ সুপার কামরুজ্জামানের নির্দেশে কোতয়ালি পুলিশের স্পেশাল টিম তৎপর হয়। তারা গাড়িখানা রোডে অবস্থিত বহুলালোচিত হোটেল সিলেট বোডিং, হোটেল আমিনসহ কয়েকটি হোটেলে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে খরিদ্দার ও যৌনকর্মীদের আটক শুরু করে। একপর্যায়ে অবৈধ এ কারবারটি একরকম বন্ধ হয়। বর্তমানে আবাসিক হোটেলগুলো সেই পুরনো ব্যবসায় (যৌন ব্যবসা) ফিরে গেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি শহরের মোমিননগর মার্কেট এলাকায় অবস্থিত যশোর আবাসিক হোটেলে পুলিশ অভিযান চালায়। তারা এসময় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে কয়েকজন নারী-পুরুষকে আটক করেন। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন আটককৃতরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে হোটেলে অবস্থান করছিল। প্রসঙ্গত, এরআগে একই স্থানে আবাসিক হোটেল ‘ইউরোপেনশন’ দেহ ব্যবসার মাধ্যমে আলোচিত হয়ে উঠলে প্রশাসন এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ‘ইউরোপেনশন’ তার কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও ওই স্থানে ব্যবসা করছে ‘সুপার স্টার’ নামে একটি হোটেল।
এই আবাসিক হোটেলে পুরোদমে অবৈধ কারবার চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। কারণ হিসেবে জানা গেল, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে দু’ব্যক্তি এই হোটেলটি পরিচালনা করছে। দিনে-রাতে সমানতালে এখানে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। কিছুদিন আগে কোতয়ালি থানা পুলিশ এখানে অভিযান চালিয়ে নড়াইলের আলোচিত এক কলগার্লসহ দু’জনকে আটক করে। এসময় হোটেল ম্যানেজার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ৬ হাজার টাকা গুঁজে দিলে তিনি আটক দু’জনকেই ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসেন। খবরটি প্রথমে গোপন থাকলেও পরে তা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর আগে শহরের এমকে রোডে আর এস হোটেল থেকে পুলিশ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, অবৈধ কারবার চলে এমন সব আবাসিক হোটেল থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নেন কোতয়ালি থানাসহ সদর ও চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা। এছাড়া সাংবাদিক নামধারী টাউটরাও চাঁদা নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। সচেতন মহল বলছেন, অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এমন সব হোটেলের তালিকা করে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদাবি ও অভিযান প্রয়োজন।
(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
মন্তব্যসমূহ