ভালুকা উপজেলার কাতলামারী ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেনীর মেধাবি ছাত্রী তাহমিনা আক্তার(১৩)কে জোরপূর্বক বাল্য বিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে ওই মাদরাসার সভাপতি ও এলাকার কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু ৫লাখ টাকার দেরমোহন ধার্যকরে কাবিনটি রেজিস্ট্রি করেছেন । ঘটনাটি ঘটেছে ২৪ এপ্রিল রাতে পাঁচগাঁও গ্রামের ঢেকির ভিটার এলাকায়। ঘটনা পর থেকে তাহমিনার পরিবারের লোকজন গ্রেফতার এড়ানো জন্য বাড়ি থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার সময় বরের পরিবার,তাহমিনার বাবা ও মজনু মিয়া উঠে পড়ে লেগেছেন। প্রশাসন ও সাংবাদিকরা যেন না জানে।
কাতলামারি ইসলামী দাখিল মাদরসার সুপার জানান, এ মাদরাসায় ৮শ্রেনীতে মোট ৪২ছাত্র-ছাত্রীর রয়েছে তাদের মাঝে পাঁচগাঁও গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে তাহমিনা আক্তার খুবই মেধাবি ক্লাশের মাঝে তার রোল নম্বর ১। গত ২৪ এপ্রিল রাতে তাহমিনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার পিতা ও কাতলামারি ইসলামী দাখিল মাদরসার সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু জোরপূর্বক কাতলামারি গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে আমিনুল ইসলাম(২৮)এর সাথে বিয়ে দেয়। এটি ছিল আমিনুল ইসলামের দ্বিতীয় বিয়ে। এ বিয়েতে তাহমিনা মা সাহেরা খাতুন ও তার বড় বোন বাঁধা দিয়েও বিয়ে বন্ধ করতে পারেননি। বিয়েটি পড়ান ওই মহল্লার ঈমাম আমীর হোসেন। আমীর হোসেন বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় মোবাইল করে নিয়ে আমাকে দিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে পড়ান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডসহ আশপাশের এলাকা কাজীর দায়িত্বে আছেন কাতলামারি ইসলামী মাদরাসার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। কাগজেপত্রে সাইফুল ইসলাম কাজী থাকলেও মুলত কাজীর কাজ গুলো করেন তার ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু। সরকার বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য কঠোর অবস্থান নেয়ার পর বিতর্কিত ও বাল্য বিয়ের জন্য মজনু কাবিনের একাধিক বই প্রেস থেকে ছাপিয়ে ওই সব বই এর মাঝে বাল্য বিয়েসহ বির্তকিত বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহমিনার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটিয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু। বর পক্ষের কাছে থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৫লাখ টাকা দেরমোহন দিয়ে কাবিন রেজিস্ট্রি করেছেন। যেহেতু আমিনুলের এটি ২য় বিয়ে যদি কাবিন রেজিস্ট্রি করা না হতো তাহমিনার বাবা আব্দুস সালাম এ বিয়েতে দিতো না বলে অনেকেই বলেন।
মাদরাসার সুপার মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন ভালুকা ডট কম কে বলেন,২৫এপ্রিল মাদরাসায় গিয়ে শুনতে পাই ৮ম শ্রেনীর ফাস্ট গার্লস তাহমিনার বিয়ে হয়ে গেছে। বিষয়টি শুনামাত্রই কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাইনি। শুনলাম বিয়ের পর থেকেই গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। অবশেষে তাহমিনা বড় বোন ও মা এসে আমাকে বলেন মেয়েটি বিয়ে করতে চাইনি। তাহমিনার বাবা ও মজনু এ বিয়ে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু ও তার পিতা সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তাঁরা বিষয়টি সম্পূর্ন অস্বীকার করে বলেন আমরা কিছুই জানিনা।
কে এই মজনু!
গত জানুয়ারী মাসে ভালুকা ডট কম সহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায়“এক যুবলীগ নেতার প্রভাব, ভালুকায় কাতলামারি দাখিল মাদরাসায় পিতা-পূত্রের নিয়োগ বাণিজ্য” এ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ওই সংবাদটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ হলে বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)কে তদন্তের দায়িত্ব দেন। বিষয়টি দীর্ঘ তদন্তে সত্যতা মেলেছে।ওই মাদরাসার সুপার পদসহ তিন পদে বাপ বেটা প্রায় ৪০লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।
এছাড়াও মল্লিকবাড়ি ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আতিকুল ইসলামাকে সুপার পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৮নং ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মজনুু ও তার পিতা সাইফুল ইসলাম ৮লাখ, ৮৫হাজার টাকা নিয়ে চাকরিও দেয়নি টাকাও ফেরত দেয়নি। ওই টাকা ফেরত দেয়ার নাম করে মজনু বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করছেন। একই পদের জন্য ওই মাদরাসার সহকারী মৌলভী শাহজাহানের কাছ থেকে ১লাখ ৬৫হাজার টাকা নিন। অবশেষে ওই পদে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাওলানা মোফাজ্জল হোসেনকে সুপার পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ