ময়মনসিংহ বিভাগের নিহত দুই কনস্টেবলের বাড়িতে শোকের মাতম

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন ওই হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার জহিরুল ইসলাম তপু এবং নেত্রকোনার মদন উপজেলার আনসারুল হক।
নতুন ঘরে ওঠা হল না তপুর : ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া প্রতিনিধি জানান, দুই ভাই চার বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপু (২৫)। বেতনের টাকায় বাড়িতে একটি নতুন ঘর করেছেন। ঈদের আগের দিন মোবাইল ফোনে বৃদ্ধা মা জোবেদা বেগমকে জানান, ঈদের ছুটি হয়েছে। তবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের নামাজ শেষ হলে বাড়ি ফিরে আসব। বাড়িতে এসে নতুন ঘরে মিলাদ পড়াব। এরপর নতুন ঘরে উঠব তোমাকে নিয়ে। সেই নতুন ঘরে মাসহ ভাইবোনদের নিয়ে উঠা হল না তপুর।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের বালাশ্বর ভাটিপাড়া গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ কনস্টেবল আবদুল মজিদের ছেলে জহিরুল ইসলাম তপু। তপুর চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান সেলিম জানান, হামলার খবর শোনার পর থেকেই বৃদ্ধা মাসহ ভাইবোনরা অজানা এক আতংকে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাড়িতে খবর আসে তপু ওই হামলায় নিহত হয়েছেন। এরপর মা, ভাইবোনসহ স্বজনদের আহাজারিতে গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। পুরো গ্রামের ঈদ আনন্দ পরিণত হয় শোকে।
দেওখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশিকুল হক আশিক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বাবা আবদুল মজিদ জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আর তারই ছোট ছেলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিলেন। বাবার চাকরি সুবাদে দুই ভাইবোন ফাতেমা খাতুন ও জহিরুল ইসলাম তপু পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। কনস্টেবল তপু কর্মরত ছিলেন কিশোরগঞ্জে আর বড় বোন ফাতেমা ছিলেন ঢাকায়। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তপুর লাশ নেয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। নাড়ি ছেঁড়া ধনের লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান বৃদ্ধা মা। ভাইবোনদের কান্নায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত কেউ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন সুলতানা। রাত ১২টায় ভাটিপাড়া বালাশ্বর ঈদগাহ মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয় তপুর লাশ। দাফনের দু’দিন পরও থামছে না স্বজনদের কান্না। বৃদ্ধা মা আহাজারি করে বলছেন, আমার তপুকে এনে দাও, তপু আমাকে নিয়ে নতুন ঘরে উঠবে।
শোকের মাতম আনসারুলের বাড়িতে : মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, কনস্টেবল আনসারুল হক (২৭) কিশোরগঞ্জে তার চাচাতো বোনের জামাই হারুনুর রশীদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। জঙ্গি হামলায় আনসারুল মারা যাওয়ার ঘটনা জানতে পেয়ে হারুনুর রশীদ গ্রামের বাড়িতে ফোন করে জানান। খবর শুনে মাটিয়ে লুটিয়ে বিলাপ করছিলেন আনসারুলের বৃদ্ধা মা রাবেয়া খাতুন। স্ত্রী লুনা আক্তারও বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বারবার বলছিলেন, প্রধান উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে এখন তারা কিভাবে বেঁচে থাকবেন।
বৃহস্পতিবার (ঈদের দিন) বিকালে লাশ আসার খবরে তার বাড়িতে ভিড় করেন শত শত মানুষ। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী, কেন্দুয়া নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ আবু নাসের, মদন থানার ওসি মাজেদুর রহমানসহ এলাকার লোকেরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। (সূত্র: যুগান্তর)

মন্তব্যসমূহ