এসব আম দিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল জুস। ছবি: প্রথম আলোপচা আম দিয়ে ‘পাল্প’ তৈরি করার অভিযোগে সেজান জুস কারখানাকে আজ বৃহস্পতিবার দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দ করা হয় দুর্গন্ধযুক্ত ৪০০ মণ পচা আম। পরে অবশ্য তা ধ্বংস করা হয়। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কারখানাটি অবস্থিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল আটটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুর এলাকায় গাড়ি তল্লাশি করছিল। এ সময় তারা একটি গাড়িতে দুর্গন্ধযুক্ত পচা আমের গন্ধ পায়। তারা তখন জানতে পারে, গাড়িটি উপজেলার চব্বিশনগরের অবস্থিত সেজান জুস কারখানায় যাচ্ছে। পুলিশ তৎক্ষণাৎ বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনির হোসেনকে জানান। সহকারী কমিশনার পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি আমবোঝাই চারটি গাড়ি উপজেলা চত্বরে নিয়ে আসেন। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ হোসেন ও গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ আমগুলো দেখেন। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০০ মণ পচা আম ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখান থেকে আমগুলোকে উপজেলার সাহাব্দিপুর এলাকায় ফাঁকা জায়গায় এনে ধ্বংস করা হয়।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ জানান, পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত আমগুলো ৬০০ টাকা মণ দরে কিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা হচ্ছিল। জুস তৈরির উদ্দেশ্যে এই পচা আমগুলো আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, উপজেলার সারেংপুরে জব্দ করা আম ধ্বংস করার পরে সেজান জুস কারখানায় অভিযান চালানো হয়। কারখানার ভেতরে গিয়ে পচা ও পোকা ধরা আম দিয়েই জুস তৈরি করতে দেখা যায়। সেখানে গন্ধে টেকা যাচ্ছিল না। ভেতরেও প্রায় ২০০ মণ পচা আম পাওয়া যায়।
জব্দ করা হয় ৪০০ মণ পচা আম। ছবি: প্রথম আলোআদালতের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, যে কর্মচারীরা জুস তৈরি করছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করা হয়, নিজের বাচ্চাকে তাঁরা এই আমের জুস খাওয়ান কি না? তখন তাঁরা বলেছেন, তাঁরা নিজের বাচ্চাকে এই জুস খাওয়ান না। কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল করিমকে জিজ্ঞেস করা হয়, চোখ বন্ধ করে যেকোনো একটি আম হাতে তুলে খেতে দিলে আপনি খাবেন কি না? ব্যবস্থাপক বলেছেন, তিনি খেতে পারবেন না। তিনিও বলেন, নিজের বাচ্চাকে তাঁরা এই জুস খাওয়ান না। তাহলে এই আম দিয়ে কেন জুস তৈরি করেন, জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। কম দামে পাওয়া যাচ্ছিল, তাই তাঁরা এ আম দিয়ে জুস তৈরি করছেন।
আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন আমগুলো জব্দ করে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। আমগুলো সেখানেই ধ্বংস করা হয়। আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করলে কারখানার ব্যবস্থাপক সঙ্গে সঙ্গে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন।
ওই কারখানায় কর্মচারীরা খালি হাতে কাজ করছিলেন। এ অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের গ্লাভসের ব্যবস্থা করতে এবং মানসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করার নির্দেশ দিয়ে আসেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা কারখানাটি আবার পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়ে আসেন।
মন্তব্যসমূহ