গাজীপুরে পৃথক তিনটি হত্যার দায়ে একই পরিবারের ৩জনের ফাঁসি ও ৪জনের যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ
গাজীপুরে পৃথক স্থানে পৃথক তিনটি হত্যার দায়ে একই পরিবারের ৩জনের ফাঁসি আদেশ এবং ৪জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেছেন আদালত।
৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ ফজলে এলাহী ভূইয়া গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ খাইলকুর এলাকায় সাফিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারীকে হত্যার দায়ে বাবা, মা ও ছেলেকে ফাঁসির আদেশ দেন এবং সেই সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও আদেশ দেয়া হয় রায়ে। এছাড়া অপর একটি ধারায় প্রত্যেককে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নারয়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার ভবনাথপুর গ্রামের মৃত মুনসুর আলীর ছেলে সিদ্দিক ভান্ডারী, তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও ছেলে তারেক ওরফে মুরাদ হোসেন। তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার দক্ষিণ খাইলকুর এলাকায় ভাড়া থাকতো।
গাজীপুর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রবিউল ইসলাম মামলার বরাত দিয়ে আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, গাজীপুর মহানগরীর খাইলকুর এলাকার জমির হোসেনের পাশের বাড়িতে উক্ত আসামিরা ভাড়া থাকতো। ২০০৮ সালের ১৪ মে বিকালে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জমির হোসেনের বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। জমির হোসেনের স্ত্রী মোছাঃ সাফিয়া বেগম (৬৫) আলমারী থেকে স্বর্ণলংকার বের করার সময় তাদের দেখে ফেলে। এ কারণে আসামিরা সাফিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় জমির হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই তিনজনের জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পায়। এ ঘটনায় তদন্ত শেষ ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুর থানার এসআই সুজায়েত হোসেন ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। শুনানি শেষে আদালত বুধবার এ রায় প্রদান করেন।
আদালতে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট আমজাদ হোসেন কাজল ও আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে সরকার নিয়োজিত আইনজীবী এডভোকেট তমিজ উদ্দিন মামলা পরিচালনা করেন।
অপরদিকে, গাজীপুরে স্টার জলসা দেখতে বাধা দেয়ায় স্ত্রীর ছুরিকাঘাতে স্বামী হত্যার অভিযোগে স্ত্রী নাহিদা আকন্দ ওরফে রিপা আক্তারের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম এনামুল হক জনাকীর্ন আদালতে এ দণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত নাহিদা আকন্দ ওরফে রীপা নরসিংদীর মনোহরদী থানার পশ্চিম চালাকচর গ্রামের মতিউল ইসলাম ওরফে বাবু মেম্বারের মেয়ে এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া এলাকার মোঃ শাহজাহানের ছেলে সোহরাব হোসেনের স্ত্রী।
গাজীপুর আদালতের পিপি এডভোকেট মোঃ হারিছ উদ্দিন আহমদ আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া এলাকার মোঃ শাহজাহানের পুত্র সোহরাব হোসেন স্ত্রী নাহিদা আকন্দ ওরফে রিপা আক্তার ও ছয় বছর বয়সী সন্তান নিলয়কে নিয়ে গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়ায় জনৈক মনিরের বাসায় ভাড়া থেকে এয়ারটেল মোবাইল ফোন কম্পানিতে চাকুরী করতেন। সোহরাব হোসেন ওরফে আমির হোসেন পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার পশ্চিম চালাকচর এলাকার বাবু মেম্বারের মেয়ে নাহিদা আকন্দ রিপাকে ২০০৭ সালে বিয়ে করে। তাদের ঘরে নিলয়(৬) নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
বাদী শাহজাহান মামলায় উল্লেখ করেন, সোহরাব হোসেনের স্ত্রী রিপা আক্তার উশৃংখল প্রকৃতির ছিলেন।
ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়ার ভাড়া বাসায় রিপা টিভিতে স্টার জলসা দেখছিল। বাসায় ফিরে স্বামী সোহরাব রীপাকে স্টার জলসা দেখতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে দুদজনের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রী রিপার ছুরিকাঘাতে স্বামী সোহরাব হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় সোহরাবের বাবা শাহজাহান বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আল মামুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম এনামুল হক আদালতে ১০জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে বুধবার এ হত্যা মামলার রায়ে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আসামী রিপা আক্তারকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। বিচারক একই সাথে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে এক মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেন।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি মোঃ হারিছঊদ্দিন আহম্মদ। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবি বেগম রওশন আরা খানম।
অপরদিকে, গাজীপুরে কাঠ ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন ও সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোঃ ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কাপাসিয়া থানার জালিশা গ্রামের মৃত আলমাছ আলী মোড়লের ছেলে লোকমান হোসেন শাহীন ওরফে বাঘা লোকমান (৩৮), একই গ্রামের ফজলুল হক পলানের ছেলে মোস্তফা (৩২) ও কালীগঞ্জ থানার চর শৈলাদী গ্রামের মৃত তফিজ উদ্দিন ওরফে অফিজ উদ্দিন আকন্দের ছেলে মোঃ মুনসুর (২৮)।
গাজীপুর আদালতের অতিরিক্ত পিপি শরীফ মোঃ ফজলে রাব্বি আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, কাপাসিয়া থানার জালিশা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন পলানকে (৩০) ২০০৮ সালের ১৪ জুন আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে রাখে।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা নিহতের লাশ পুকুরে ভাসতে দেখে কাপাসিয়া থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হেলেনা বেগম বাদী হয়ে লোকমানসহ অজ্ঞাত ৬/৭ জনকে আসামি করে কাপাসিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আবুল কাশেম তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন।

মন্তব্যসমূহ